আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুনিয়েছেন সেই গল্প যেভাবে শুরু হলো- ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা, (২৭ জুলাই) পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন এবং জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়ে তিনি এ গল্প বলেন। পাবলিক সার্ভিস দিবস ছিল গত ২৩ জুলাই, তার পরিবর্তে মহামারী করোনার কারণে এটির আয়োজন করা হয় আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
আজ জুলাই মাসের ২৭ তারিখ আমাদের জন্য বিশেষ দিন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনটি আমারও বিশেষ দিন। পাকিস্তান দিবস, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ। ঐদিন বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেনি। সেদিন (ধানমন্ডি) ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। আমি তখন সন্তানসম্ভবা। আমি নিয়মিত আমার বাবার হাত-পায়ের নখ কেটে দিতাম। সেদিন মগভর্তি পানি নিয়ে বাবার নখ কাটতে বসলাম। বাবা তখন বললেন, হ্যাঁ, ভালোভাবে কেটে দে, কারণ পরে আর সুযোগ পাবি কি-না! তবে তোর ছেলে সন্তান হবে, সে ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করবে, তার নাম রাখবি “জয়”।
সেই ২৫ মার্চের কালোরাতের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জয়ের জন্ম হয়েছে মেডিকেলে, আমাদের বন্দি অবস্থায়। পরবর্তীতে যখন বাচ্চা নিয়ে কারাগারে আসলাম তখন একজন পাকিস্তান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করে তার নাম কী? তখন আমি তার নাম জয়। তারপর সেই পাকিস্তানি সেনা বলেন মানে কী? তখন আমি বলি, জয় মানে জয়, ভিক্টরি। তখন পাকিস্তানি সেনারা এই ছোট্ট শিশুকেও গালি দেয়।’
প্রধানন্ত্রী আরও বলেন, ‘আজ জয়ের জন্মদিন। আজ জয়ের ৫০ বছর বয়স হলো । মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে আমরা একসাথে হতে পারলাম না, এটাও আরেকটা দুঃখ। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই, আপনারা আজ স্মরণ করছেন এই দিনটি। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমি যেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। এটা জয়েরই চিন্তা-ধারণা। কারণ, যখন ১৯৮১ সালে এসে বার বার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করি। আমাকে তখন বার বার গ্রেপ্তার-গৃহবন্দি করা হয়েছে। তখন আমার বাবার বন্ধু আজিজ সাত্তার কাকা জয় ও পুতুলকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। আর সেই স্কুল থেকেই জয় কম্পিউটার শিক্ষা নেয়। যখন ছুটিতে আসতো তখন কম্পিউটার নিয়ে আসতো। জয়ের নিকট থেকেই আমি কম্পিউটার শিখেছি। ১৯৯১ সালে যখন পার্টির জন্য অনেক দামে কম্পিউটার ক্রয় করি, তখন-ই আমরা আলোচনা করি, কীভাবে দেশে কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা যায়।’
১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, তখন জয় আমাকে পরামর্শ দিলো কম্পিউটার থেকে ট্যাক্স তুলতে হবে, দামে সস্তা করতে হবে। মানুষের নিকট সহজলভ্য করতে হবে, মানুষকে ট্রেনিং দিতে হবে। তাহলেই মানুষ এটা শিখতে পারবে। আর এভাবেই কিন্তু আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরে আমি আবার যখন সরকারে আসি, তখন দেখি কেউই এটা ব্যবহার করে না। আমি নিজেই তখন নির্দেশ দেই, সব ফাইল যেন কম্পিউটার কম্পোজ হয়ে আমার নিকটে আসে। কিন্তু এখন আমরা সে সুফল ভোগ করছি।’
আবার প্রশাসন নিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সরকার মানেই তো জনগণের সেবক। সরকারি কর্মকর্তাদের যদি সঠিক কর্মপরিকল্পনা দেয়া যায় দিকনির্দেশনা দেয়া যায়ে, তবে তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারে সেটাই আজকে প্রমাণিত। যদি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে দেয়া যায়, তাহলেই সব কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব। যাদেরকে দিয়ে আমরা কাজ করবো, তাদের সঠিক ট্রেনিং দেয়ার কাজটিও আমরা করেছি।’
তিনি করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বলেন, ‘সবাইকে ভ্যাকসিন নিশ্চিত করবো। ইতোমধ্যে অনেক ভ্যাকসিন কিনেছি। যত টাকায় লাগুক আমরা আরও ভ্যাকসিন কিনবো। আমাদের দেশেই আমরা ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন তৈরি করবো। সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পরিবার এবং তাদের বাড়ির লোকজনকেও ভ্যাকসিন দিতে বলেছি।’ তখন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রশাসন পদক দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন । সভাপতির বক্তব্য প্রদান করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।