প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা আলজারি জোসেফ আলো ছড়ালেন আবারও। তবে তার ছোবল সামলে প্রতিরোধ গড়লেন মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলাটা নিরাপদে কাটিয়ে দিলেন এই দুই তরুণ।
স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫০ রান। ওপেনার জয় ৬০ বলে খেলছেন ১৮ রানে। চারে নামা শান্তর রান ২৩ বলে ৮। এই দুই ব্যাটসম্যান প্রথম ইনিংসে ফিরেছিলেন শূন্য রানে।
এবার ৫০ বলে গড়েছেন ১৫ রানের জুটি। ক্যারিবিয়ান পেসারদের সামলেছেন ঠিকঠাক। ছাড়ার বল ছেড়েছেন, একদম জোনে পেলেই কেবল মেরেছেন।
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেট অনেক সহজ হয়ে এসেছে। তবুও ক্যারিবিয়ানদের আবার ব্যাটিংয়ে পাঠানো এখনও বেশ দূরের পথ। প্রথম ইনিংসে ১৬২ রানের লিড নেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনও ১১২ রানে এগিয়ে।
চাইলে উইকেটে থাকা যায়, তবে দ্রুত রান তোলা সহজ নয়। তাই জয় ও শান্ত নিচ্ছেন না কোনো ঝুঁকি। লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়ে খেলছেন সাবধানী ইনিংস।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৬৫ রানে থামিয়ে দিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ শুরুটা ভালোই করে। শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তামিম। বেশ শট খেলছিলেন তিনি। জয় ছিলেন সাবধানী।
তাদের জুটি ভাঙেন জোসেফ। এই পেসারের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে জশুয়া দা সিলভার গ্লাভসে ধরা পড়েন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনার চারটি চারে ৩১ বলে করেন ২২।
প্রমোশন দিয়ে তিনে পাঠানো হয় মেহেদী হাসান মিরাজকে। তবে কাজে লাগেনি ফাটকা। জোসেফের বাড়তি বাউন্স করা বলে ব্যাক ফুট পাঞ্চ করার চেষ্টায় স্লিপে ধরা পড়েন মিরাজ (৬ বলে ২)।
বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া শান্ত খেলছেন আস্থার সঙ্গে। শেষ দিকে বাম হাঁটুতে সমস্যা অনুভব করলেও মাঠ ছেড়ে যাননি। খুঁড়িয়ে, খুঁড়িয়ে খেলে জয়কে নিয়ে শেষ করেন দিন।
প্রথম ইনিংসের দুঃস্বপ্নের ব্যাটিংয়ের ধাক্কা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের লাগাম এখনও ক্যারিবিয়ানদের হাতেই। অ্যান্টিগা টেস্টে লড়াই করার মতো জায়গায়ে যেতে হলে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে জয়-শান্তদের।
জোসেফ ২ উইকেট নিয়েছেন ১৪ রানে। কেমার রোচ, জেডেন সিলস ও কাইল মেয়ার্সকে এদিন কোনো উইকেট দেয়নি বাংলাদেশ।
এর আগে ২ উইকেটে ৯৫ রান নিয়ে শুক্রবার দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, বাংলাদেশের বোলাররা শুরু করেন যেন সেখান থেকেই। তবে এদিনও সফরকারীরা হাতছাড়া করে চারটি সুযোগ। তবে বোলারদের দারুণ বোলিংয়েই এরপরও ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়নি সফরকারীরা।
প্রথম দিনের মতো ততটা আর্দ্রতা ছিল না এ দিন সকালে। তবুও ব্যাটসম্যানদের বেশ ভোগান ইবাদত হোসেন। অনেকবারই একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি তার চমৎকার সব ইনসুইঙ্গার। একবার যাও নিয়েছিল, বুঝতেই পারেননি বাংলাদেশের কেউ। বল গ্লাভসে জমিয়ে আবেদনের মতো করেছিলেন কিপার নুরুল হাসান সোহান। তবে ব্যাটে বলের মৃদু স্পর্শ বুঝত পারেননি তিনিসহ কেউই। তাই রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ, হাতছাড়া হয় সুযোগ। সে সময় ১৪ রানে ছিলেন বনার।
মুস্তাফিজুর রহমান ও সৈয়দ খালেদ আহমেদও ধরে রাখেন চাপ। খালেদের আচমকা লাফানো বলে বনার ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। কিন্তু কিপার সোহান কিংবা প্রথম স্লিপে থাকা শান্ত কেউই ক্যাচ ধরার চেষ্টা করেননি। ২২ রানে বেঁচে যান বনার।
দিনের সপ্তম ওভারে লিড নিয়ে ধীর গতিতে এগোতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৭৪ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন ব্র্যাথওয়েট। জুটির রান পঞ্চাশে যায় ১৫১ বলে।
প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভারে আসে কেবল ৩৮ রান। পানি পানের বিরতির পর প্রথম ওভারেই বনারকে ফিরিয়ে ১৭৫ বল স্থায়ী ৬২ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। সামনের পায়ে খেলার বদলে পিছিয়ে গিয়ে সাকিবের আর্ম বল খেলার চেষ্টায় সফল হননি বনার। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্টাম্প এলেমেলো করে দেয় বল।
৯৬ বলে তিন চারে ৩৩ রান করেন দুইবার বেঁচে যাওয়া বনার।
আগের দিন শূন্য ও ১৬ রানে বেঁচে যাওয়া ব্র্যাথওয়েট ৬৩ রানে ক্যাচ দেন লেগ স্লিপে। কিন্তু মিরাজের বলে কঠিন সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি জয়।
তিনবার বেঁচে গিয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ব্র্যাথওয়েট। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। ৮০ ওভার শেষ হতেই দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। এই সময়ে কিছু আলগা বল পেয়ে রানের গতি বাড়ান দুই ব্যাটসম্যান। খালেদের কিছুটা নিচু হয়ে ভেতরে ঢোকা বলে ব্র্যাথওয়েট এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে ১৬২ বল স্থায়ী ৬৩ রানের জুটি।
পঞ্চমবারের মতো নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়া ব্র্যাথওয়েট ২৬৮ বলে ৯ চারে করেন ৯৪ রান। মিরাজের দারুণ বোলিংয়ে এরপর তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। স্বাগতিকরা শেষ ৭ উইকেট হারায় কেবল ৬৮ রানে।
প্রথম ৪৩ বলে কেবল তিনটি স্কোরিং শট খেল ব্ল্যাকউডকে (৯ চারে ৬৩) দুর্দান্ত এক ক্যাচে বিদায় করেন মিরাজ। চা-বিরতির আগে-পরে মিলিয়ে ১০.৫ ওভারে টানা স্পেলে এই অফ স্পিনার নেন ৪ উইকেট। ক্যারিবিয়ানদের শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কে যান কেবল অভিষিক্ত গুডাকেশ মোটি। চারটি চারে তিনি অপরাজিত থাকেন ২৩ রানে।
মিরাজ ৪ উইকেট নেন ৫৯ রানে। দুটি করে উইকেট নেন খালেদ ও ইবাদত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৩
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৬৫
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২০ ওভারে ৫০/২ (তামিম ২২, জয় ১৮, মিরাজ ২, শান্ত ৮; রোচ ৮-৪-১৯-০, সিলস ৪-০-১৬-০, জোসেফ ৬-২-১৪-২, মেয়ার্স ২-১-১-০)