নন এমপিও শিক্ষকদের জন্য সুখবর। তাদের আন্দোলন আর অপেক্ষার অবসান হচ্ছে এ বছর। তিন বছর পর আবার শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিগত বছরের চেয়ে এবারের বাজেটে এমপিওখাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালের মতো এবারও অনলাইনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে।
এমপিওভুক্তির জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ নতুন সফটওয়্যার তৈরি করে পরীক্ষামূলক তথ্য আপলোড করে ভুলত্রুটি সংশোধন করেছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে। এ বিভাগের সফটওয়্যার প্রস্তুত হলেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে আবেদন নেওয়া শুরু হবে। আগামী মাসে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত শনিবার শিক্ষা বিষয়ক সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঝুলে থাকা অনেক কাজ শেষ করতে সক্ষম হয়েছি। নানা অসঙ্গতি থাকা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এমপিওভুক্তি নীতিমালা যুগোপযোগী করে তোলা হয়েছে। সংশোধিত এ নীতিমালার আলোকে চলতি বছর নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন চাওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ। পরীক্ষামূলকভাবে কমিটির সদস্যরা তথ্য আপলোড করে দেখেছেন। এখন মন্ত্রীকে দেখানো হবে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ হলেই প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নিয়ে আবেদন নেওয়া শুরু হবে। নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। কেউ তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্ত হয়ে ধরা পরলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনলাইনে আবেদন নেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থী, পরীক্ষার ফলাফল, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি, অবকাঠামোসহ এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করার আগে স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়িত করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দেওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। নানা ধরনের বিতর্ক এড়াতে নতুন এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ২০০ কোটি ও কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয় এ খাতে থোক বরাদ্দের চেষ্টা করছে। কারণ, ২৫০ কোটি টাকা দিয়ে দুই বিভাগের যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে না।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, এমপিওভুক্তিতে টাকার কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষার নানা খাত রয়েছে। সে খাত থেকেও সরকার ইচ্ছে করলে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ দিতে পারে। আগামী মাসে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
প্রায় ১০ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। তখন এমপিওভুক্তির জন্য ৯ হাজার ৪৯৫টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে আবেদন করে। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ২৭৩০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রের হার্ড কপি যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে দুই হাজার ৬১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। নিয়োগে ত্রুটি থাকায় এরমধ্যে বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার একজন শিক্ষক-কর্মচারীও এখন পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। ২০১৯ সালের শেষ দিকে বিশেষ ক্ষমতা বলে সরকার আরও সাতটি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বাদ দেওয়া হয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এমপিও নীতিমালার শর্তপূরণ না করেই তালিকাভুক্তির প্রমাণ পায় চূড়ান্ত বাচাই কমিটি। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলার আসামিদের নামে প্রতিষ্ঠিত কিছু প্রতিষ্ঠানও বাদ দেওয়া হয়। ওই সময়ে সরকার ঘোষণা করেছিল, এমপিওভুক্তি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিবছরই যোগ্য প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু এমপিও নীতিমালা সংশোধন করতে প্রায় দুই বছর সময় লাগায় কমিটি। নীতিমালার কঠোর শর্তের কারণে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এমপিও খাতে বরাদ্দ চারশ কোটি টাকার বেশি ফেরত যায়। তখন নন-এমপিও শিক্ষকরা শহর ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে গত মার্চে জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
সূত্র জানায়, গত তিন বছরে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সংশোধিত নীতিমালায় একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য মার্কিং তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে সারাদেশে সাত হাজারের বেশি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান পৌনে দুই লাখ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত আছেন।
বেসরকারি স্কুল ও কলেজের সংশোধিত এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে পাসের হার ও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা শিথিল করা হয়েছে। ১০০ নম্বরের গ্রেডিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে একাডেমিক স্বীকৃতিতে ২৫ নম্বর তুলে দেওয়া হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ২৫ নম্বরের স্থলে ৪০ করা হয়েছে। অন্য ক্যাটাগরির ২৫ নম্বরের স্থলে ৩০ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে না। ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামের প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হবে না। নেতিবাচক নামের কারণে সমাজে প্রভাব পড়তে পারে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে না।