প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আটকে থাকা ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা বিকল্প উপায়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মহামারী করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে চলতি বছরের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি এসএসসি এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, এবার এসএসসি ও এইচএসসি উভয় ক্ষেত্রেই গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে ছয়টি সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাইয়ের সুযোগ বাড়ছে। পূর্বে ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭-৮টির উত্তর করতে হলেও এবার করতে হবে চারটি প্রশ্নের উত্তর।
আবার শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু এবার নৈর্বচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে, এ জন্য কেন্দ্রসংখ্যা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রত্যেক বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। আবার আবশ্যিক বিষয় থাকলে যেসব কেন্দ্রে ৫০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হতো, তবে আবশ্যিক বিষয় না থাকার কারণে সেই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ১০০ জন। যার ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে না।
শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা আরও বলেছেন, কোনো শিক্ষার্থীর এবার এইচএসসিতে যদি নৈর্বচনিক বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত থাকে, তবে তাকে এই তিন বিষয়ের ছয়টি পত্রে পরীক্ষা দিতে হবে। আগের তিন ঘণ্টার পরীক্ষা এ বছর হবে দেড় ঘণ্টায়। আবার রচনামূলক অংশে নম্বর থাকবে ৩৫ এবং এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) থাকবে ১৫ নম্বরের।
প্রশ্নপত্রের ধরণ কোনো পরিবর্তন হবে না।
প্রশ্নপত্র এখন যেভাবে হয়, সেভাবেই হবে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ থাকবে। আগে ১০টি প্রশ্নের মধ্য থেকে ৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো, এখনও সেই ১০টি প্রশ্নই থাকবে। তবে সে ১০টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর দিতে হবে চারটি প্রশ্নের। এতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে। প্রত্যেক বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। কিন্তু ৫০ নম্বরকে ১০০তে রূপান্তর করে পরীক্ষার ফল দেওয়া হবে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এভাবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে পরীক্ষা নেওয়া আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। তারা উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে বলছে, আগষ্ট মাস প্রায় শেষ। এখনই সরকারকে ঘোষণা দেওয়া উচিত পরীক্ষা আদৌ নেওয়া সম্ভব কি-না। এর কারণ এইচএসসি পরীক্ষাদের পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিদেশে পড়াশুনার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই।
অন্যদিকে আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি টিকা নেওয়ার হারও বেড়েছে। যেসক শিক্ষক-কর্মকর্তারা পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা প্রায় সবাই টিকার আওতায় এসেছেন। এজন্য আমরা ছোট পরিসরে হলেও পরীক্ষাটা নিতে চাই, ফলে কম করেও হলেও মেধার মূল্যায়ন হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। আবার এইচএসসি ফরম পূরণের কাজ চলছে। এ (আগস্ট) মাসের মধ্যে এ পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ হয়ে যাবে। তবে এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার পুরো পরিস্থিতি এখনও অনুকূলে।
তিনি বলেন আরও বলেছেন, অটোপাসের অপবাদ আমরা আর নিতে চাই না। মহামারী করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে। যার ফলে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে পারব।
অন্যান্য বিষয়ে যেভাবে হবে মূল্যায়ন
আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তবে এসব বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের আগের পাবলিক পরীক্ষার সাবজেক্ট ম্যাপিং করে মূল্যায়নের মাধ্যমে নম্বর দেওয়া হবে। যেমন এসএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে জেএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসির ফল মূল্যায়ন করা হবে। আবার এসএসসিতে (ভোকেশনাল) জেএসসি ও নবম শ্রেণি এবং এইচএসসিতে (ভোকেশনাল) এসএসসি ও একাদশের ফল মূল্যায়ন করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, যেহেতু এবার নৈর্বচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে, সে জন্য কেন্দ্রসংখ্যা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রত্যেক বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে আবশ্যিক বিষয় থাকলে যে কেন্দ্রে ৫০০ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হতো, এবছর আবশ্যিক বিষয় না থাকায় সেই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হবে বড়জোড় ১০০ জন। যার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে কোনো সমস্যা হবে না।
টিকা আওতায় প্রায় শতভাগ শিক্ষক-কর্মকর্তা
শিক্ষক-কর্মচারীদের টিাকা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতভাগ শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। চলতি মাসের গত সপ্তাহের হিসাব অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২২ শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত শিক্ষার্থী মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ জন। প্রথম ডোজ সম্পন্ন করেছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৬ হাজার ৭২ জন। ৩৪ হাজার জনেরও বেশি শিক্ষক নিবন্ধন করেছেন। এরমধ্যে ৩০ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) অধীনে আছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী। তাদের অধিকাংশ কর্মজীবী ও সবার বয়স প্রায় ১৮ বছরের বেশি। যার ফলে বেশিরভাগই নিজস্ব উদ্যোগে নিবন্ধন করে টিকা নিয়েছেন। ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর প্রায় নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
আবার সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের স্থানীয়ভাবে নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে। তাছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরকে টিকা দেওয়া জন্য চলতি মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, ৯০ শতাংশেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকার আওতায় এসেছে।