চাঁদপুর থেকে মো. লিটন নামে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের অর্থের যোগানদাতাকে আটক করেছে র্যাব-১১। শনিবার চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার বেলুতি গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়।
কুমিল্লা র্যাব-১১, সিপিসি-২, উপ-পরিচালক কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ জানানো হয়।
র্যাব জানায়, লিটন ওমান প্রবাসী। ২৬ জুন তিনি দেশে ফিরেছেন। র্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার (উপ-পরিচালক) মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এ তথ্য জানান।
র্যাব-১১ সূত্র জানিয়েছে, গত ৪ আগস্ট মোছা. পারুল বেগম নামে এক নারী একটি লিখিত অভিযোগ র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লা বরাবর প্রদান করেন। অভিযোগে তিনি জানান, তার আপন ভাই মো. জনি (২৮) দেড় বছর যাবত ওমানে কর্মরত। সেখানে থাকা অবস্থায় ওমান প্রবাসী (বাংলাদেশি) মো. তাহের মিয়া ওরফে তুষার তার ভাইকে উন্নত জীবনযাপনের প্রলোভন দেখিয়ে তুরস্কে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। এর মধ্যে সব ব্যবস্থা করে তুষারের মাধ্যমে জনি তুরস্কের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
কিছুদিন পরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জনিকে আটকে রেখে মারধর করে এবং তার কাছে ভিডিও কল দেয়। এ সময় তাদের কাছে ৭ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে তার ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা টাকা দেওয়ার জন্য তার কাছে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও একটি বিকাশ নম্বর দেয়। তাদের কথামতো বিকাশে ২৫ হাজার টাকা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬০ হাজার টাকা ট্রান্সফার করে পারুল। পরে তারা আরও টাকার জন্য তাকে চাপ দেয় এবং অবশিষ্ট টাকা না পেয়ে তার ভাইকে আরও নির্যাতন শুরু করে।
পরে পারুল খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারে যে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি চাঁদপুরের। তাই কুমিল্লা র্যাব অফিসে অভিযোগ করেন তিনি।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১১ অভিযোগকারীর দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে শনিবার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিক মো. লিটনকে আটক করে।
আটক লিটন ২৬ জুন বাংলাদেশে ছুটিতে আসেন এবং ২৫ আগস্ট চলে যাওয়ার কথা। ওমানে তিনি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কাজ করেন এবং এ চক্রের টাকা আদান-প্রদানের সঙ্গে জড়িত।
আটক লিটনের দেওয়া তথ্যমতে র্যাব জানতে পারে, ওমানে থাকা অবস্থায় মো. তাহের মিয়া ওরফে তুষার নামের এক দালালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তুষার পারুলের ভাই জনিকে প্রথমে ইরানে পাঠায়। ইরানে সুমন নামে অন্য একজন দালাল জনিকে রিসিভ করে। সেখান থেকে সুমন, জনিকে তুরস্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তুরস্কের সাইফুল ও রানা, জনিকে রিসিভ করে। এভাবে ওমান থেকে তুরস্কে পাঠানো হয়।
সংঘবদ্ধ চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে পাঠায় এবং মাঝখানে তাদের জিম্মি/আটক করে মারধর করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। মানব পাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে র্যাব সূত্রে জানা গেছে।