আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি গ্রীষ্মকালীন সবজি হলো করলা। তবে এখন সারা বছরই করলা চাষ হয়। সবজি হিসেবে করলা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। করলা ভাজি করে অথবা তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়।
আসুন আজ জেনে নিই কীভাবে ছাদে বা টবে করলা চাষ করবেন-
করলা চাষের জন্য মাটি তৈরি: কমবেশি সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায় করলা। আবার জৈব পদার্থসমৃদ্ধ দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে চাষ করলে ফলন ভালো হয়।
প্রথমে দুই ভাগ বেলে দো-আঁশ বা দো-আঁশ মাটি, গোবর ১ ভাগ, টিএসপি সার ২০-৩০ গ্রাম, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ একত্রে মিশিয়ে ড্রামে ভরে পানিতে ভিজিয়ে কমপক্ষে সপ্তাহখানেক রেখে দিতে হয়। এরপর মাটি সামান্য ওলটপালট করে চার-পাঁচ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে।
বীজ বপন পদ্ধতি: বীজ বপনের একদিন অথবা ২৪ ঘণ্টা পূর্বে ড্রাম অথবা টবের মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তবে বীজ বপন করার পর হাত দিয়ে মাটি সমতল করে চেপে দিতে হবে।
সেচ পদ্ধতি: বীজ বপন করার পর নিয়মিত পানি দিতে হবে। তবে টবে অথবা গাছের গোড়ায় যেন কোনোভাবেই পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পানি জমে থাকলে গাছের গোড়া পচে যাবে। প্রয়োজন মতো পানি দিতে হবে।
করলা গাছের পরিচর্যা: গাছ বড় হলে অপ্রয়োজনীয় লতাপাতা ছাঁটাই করে ফেলে দিতে হবে। মাটি হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে, ফলে শেকড় বৃদ্ধি পাবে। গাছেল আশেপাশে আগাছা জন্মালে তা উপড়ে ফেলতে হবে। তবে গাছের গোড়া সবসময় পরিষ্কার রাখলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উৎপাত কম হয়। গাছ কিছুটা বড় হলে মাচা করে দিতে হবে। নিয়মিত কীটনাশক ছিটাতে হবে।
পরিমাণ মতো সার প্রয়োগ করতে হবে। বীজ থেকে চারা গজানোর পর মাঝে মধ্যে পানি দিতে হবে। নিয়মিত চারার যত্ন নিতে হবে। গাছে করলা ধরা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১৫-২০ দিন পর পর নিয়মিত দিতে হবে। আবার টবে জৈব সার দিতে হবে, যেন মাটি থেকে গাছ খাদ্য উৎপাদন করে বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যায়।
করলা গাছের রোগবালাই দমন: করলা গাছে পামকিন বিটল ও মাছিপোকা সহ বিভিন্ন পোকা এবং ভাইরাসজনিত মোজাইক রোগ, পাউডারি মিলডিউসহ বিভিন্ন বালাইয়ের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। করলা গাছে রোগ বা পোকামাকড় আক্রমণ করলে কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী বালাইনাশক ছিটাতে হবে। করলা গাছকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচতে সেক্স ফেরোমন এবং বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার করা যেতে পারে।
করলা সংগ্রহ: ছোট অবস্থায়ও সংগ্রহ করতে পারেন অথবা বড় হলেও সংগ্রহ করতে পারেন করলা। তবে কাঁচা থাকতেই সংগ্রহ করতে হবে। আবার পাকা করলা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায় না। করলা পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই সংগ্রহ করতে হবে।
করলার গুণাগুণ: করলায় রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে, তা মানবদেহের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ দিয়ে থাকে।
উপকারিতা: তবে নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে নানা রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। করলা খাওয়ার ফলে চোখের সমস্যা, রক্তের সমস্যা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসাসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।