১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, শনিবার

করোনার থাবায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল গুলি, পেটের তাগিদে পেশা পরিবর্তন করছেন শিক্ষকরা

Advertisement

আজিমউিদ্দন নামে পাঠাও রাইড শেয়ারিংয়ে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বড় মসজিদের সামনে থেকে একজনকে বাইকে তোলেন। দেখতে বেশভূষায় পরিপাটি, মোটা গ্লাস ও ফ্রেমের চশমা এবং শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা চালকের আলাপে মুগ্ধ আরোহী।

কিছুটা পথ যাওয়ার পর আরোহী তার পরিচয় জানতে চাইলে বলেন, তিনি একটি কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলের অধ্যক্ষ। তবে করোনায় দীর্ঘ ১৭ মাসের ছুটি কাটিয়ে উঠতে না পেরে তিনি এখন স্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছেন।

শিক্ষক-কর্মচারীসহ সবাই ছুটিতে। তবে জীবিকার তাগিদে বাড়ির ছাদে চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র তুলে রেখে এখন রাইড শেয়ার করছেন।

তবে কিন্ডার গার্ডেন সমিতির নেতারা বলছেন, আজিমউদ্দিন কেন এমন অনেকেই জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছেন। আবার কেউ হয়েছেন দোকান কর্মচারী, কেউ আবার সবজি ও ফল বিক্রেতা। কেউ আবার গ্রামে ফিরে কৃষি কাজ করছেন।

এম ইকবাল বাহার চৌধুরী বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি বলেন, কেজি স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী এবং উদ্যোক্তারা এখন এক কথায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। পরিবারের সদন্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে প্রায় সবাই পেশা বদল করেছেন।

গত মে মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস-২০২০-এ উল্লেখ্য করা হয়েছে, দেশে প্রায় ৯ ধরনের ১ লাখ ৩৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৯১ জন, শিক্ষক ৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৭১।

আবার ২৯ হাজার ৮৯৭টি কেজি স্কুলের শিক্ষার্থী ৪০ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩ জন এবং শিক্ষক ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৭ জন। এ নিয়ে কেজি স্কুলের নেতাদের দাবি, সারা দেশে এ ধরনের স্কুল আছে প্রায় ৬০ হাজারের মতো। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।

এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে অন্তত ৫ লাখ শিক্ষক আর এই পেশায় ফিরবেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই ভাড়া বাড়িতে ছিল। যার শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র অর্থে মাধ্যমে ভাড়া, বিভিন্ন ধরনের বিল এবং শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হতো। মহামারী করোনার কারণে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারণে অনেকে ভর্তি হয়েছে কিন্তু অনেকেই ফি পরিশোধ করছেন না।

একদিকে বার্ষিক পরীক্ষা না থাকায় অন্যদিকে গত মার্চের পরে প্রতিষ্ঠান না খোলায় শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সিংহভাগ পাওনাদি আদায় করতে পারেনি।

আবার বিভিন্ন কেজি স্কুলের শিক্ষকরা জানান, গত বছরের মার্চে স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে কয়েক মাস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেতন-ভাতা দিয়েছে। পরবর্তীতে দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকায় বেতন-ভাতাও বন্ধ হয়ে যায়। এমনিতেই এ ধরনের স্কুলে শিক্ষকরা খুবই কম বেতন পান। তবে টিউশনির মাধ্যমেই বেশির ভাগ শিক্ষক ব্যয়ের চাহিদা পূরণ করতেন।

পরবর্তীতে টিউশনিও বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন তারা। এমতাবস্থায় স্বজন, পরিচিতজন এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে অনেকে কোনোমতে বেঁচে আছেন। অনেকের আবার ধারদেনার পথও সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণেই অনেকে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement