সারাদেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে আজ ৭ আগস্ট একদিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এই ক্যাম্পেইনের আওতায় সারাদেশে চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়নে, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভায় এবং সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে একযোগে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে।
টিকা স্বল্পতার কারণে ৭ দিনের পরিবর্তে আপাতত একদিন এ কর্মসূচি চলবে। শুধু আজ ৭ আগস্ট দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে এক সেশনে দেওয়া হবে প্রথম ডোজ। ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকরা পরিচয়পত্র বা প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে টিকা নিতে পারবেন।
প্রতি ওয়ার্ডে ৩শ করে ৪৫ লাখ ৮৬ হাজার ১০০ টিকা দেওয়া হবে। এসব কেন্দ্রের বিপরীতে আগাম রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ, নারী, প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পাবেন। ১৪ আগস্ট থেকে প্রাপ্তিসাপেক্ষে দেশব্যপী ৭ দিনের গণটিকা কর্মসূচি ফের শুরুর সম্ভাবনা আছে।
গত বুধবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শনিবার ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করেছিল তারা। কিন্তু টিকা স্বল্পতার কারনে পরে সাতদিনের কর্মসূচি একদিনে নামিয়ে আনা হয়।
ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পরিচালক (স্বাস্থ্য), করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য গঠিত-বিভাগীয় কমিটির সদস্য, সিটি করপোরেশন কমিটির সদস্য সচিব, জেলা কমিটির সদস্য সচিব, উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ও সব পৌরসভার মেডিক্যাল অফিসারদের পাঠানো হয়েছে।
১৮ নয়, বয়স হবে ২৫
এক সপ্তাহে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বারবার জানালেও টিকা স্বল্পতার কারণে সেখান থেকে সরে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেইসঙ্গে এ কর্মসূচিতে ১৮ বছর এবং তার বেশি বয়সী সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সেখানেও পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবার আশঙ্কায় সেখানেও পরিকল্পনায় পরিবর্তন হয়েছে।
টিকা নেওয়ার বয়সসীমা ১৮ থেকে কেন আবার ২৫ বছর করা হলো- জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ১৮ বছর বয়সী অনেকের এনআইডি নেই। আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি, এই এনআইডি ছাড়া যদি ১৮ বছর বয়সীদের টিকার আওতায় আনি; মাঠে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে সেটাকে আমরা সামাল দিতে পারবো না। সে জন্য অনেক আলোচনা করে ঠিক করেছি, বয়সসীমা ২৫ বছর হবে।
পাইলট প্রজেক্ট-সক্ষমতা যাচাইয়ের কর্মসূচি
এখন পর্যন্ত এক কোটি ২৮ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন করেছে এক কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার। ঢাকায় যারা নিবন্ধন করছেন তারা ২০ থেকে ২৫ দিন পরে ভ্যাকসিনের এসএমএস পাচ্ছেন। কারণ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষে একসঙ্গে এত মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব না। এছাড়া সরকারের হাতেও এত টিকা নেই যে, এই মানুষগুলোকে দিতে পারবে।
তাহলে কী এমন প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো যে, সারাদেশে এত বড় ক্যাম্পেইন চালু করছেন এবং যারা নিয়মিত নিবন্ধন করছেন তাদের কবে টিকার আওতায় আনতে পারবেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, ‘সারা বিশ্বে ভ্যাকসিনের ডিপ্লোম্যাসি আছে। যে ভ্যাকসিন বেশি আকারে আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে সিনোফার্ম। এই ভ্যাকসিন সিঙ্গেল ডোজ, সিঙ্গেল ভায়েল।
তিনি বলেন, এর আগে আমরা এনেছিলাম অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সেটা ছিল ১০টি ডোজের একটি ভায়েল। এটি বেশি পরিমাণে সংরক্ষণ করা যায়। ঈদের আগে আমাদের টিকা গ্রহণের পরিমাণ কম ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়ার পর গত ১০ দিনে আমরা দেখলাম প্রায় ৩০ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। এটাও একটা বড় বিষয়।’
‘আমরা চিন্তা করেছিলাম, যদি ম্যাসিভ আকারে ক্যাম্পেইন না করতে পারি বা মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি করতে না পারি, তাহলে সারাদেশে যেখানে আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে; এত মানুষকে আমরা কীভাবে কাভার করবো? এটা পাইলট প্রজেক্ট বলা যেতে পারে। আমরা নিজেদের সক্ষমতা যাচাই করতে চাই। দেখতে চাই, আমাদের লোকেরা প্রান্তিক পর্যায়ে একদিনে কী পরিমাণ টিকা নিতে পারেন’- বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।