২১ জানুয়ারি, ২০২৫, মঙ্গলবার

কারখানা খোলার খবরে প্রাণপণ ঢাকা ছুটছেন শ্রমিকরা

Advertisement

দেশজুড়ে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আগামীকাল রবিবার থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ খবরে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও শিমুলিয়াসহ ফেরিঘাটগুলোতে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। তবে ফেরি পারাপারের সময় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না যাত্রীরা।

এদিকে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠছেন যাত্রীরা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মাহেন্দ্রা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশায় করে ঘাটে আসছেন তারা।

ক্ষুব্ধ একাধিক যাত্রী জানান, হুট করে শুক্রবার জানানো হলো যে রোববার থেকে কারখানা খোলা। হাতে কম সময়। তাই ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ফিরতে হচ্ছে রাজধানীতে। যদিও তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে ঢাকার বাইরের কর্মীদের ৫ আগস্টের পরে কাজে যোগ দিতে। তারা এও বলেছে যে রবিবার থেকে কাজে যোগ না দিলে তাদের চাকরি যাবে না। কিন্তু শ্রমিকরা সেই কথায় ভরসা পাচ্ছেন না। তারা চাকরি হারানোর শঙ্কায় প্রাণপন ছুটছেন ঢাকার দিকে।

বিরুপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঢাকা মুখী কর্মীদের যাত্রীদের ব্যাপক চাপ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে দেখা গেছে শনিবার ভোর থেকে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যাত্রীরা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছেছেন হেঁটে, অটোরিকশায় কিংবা মাহেন্দ্রতে চড়ে। যানবাহন কম থাকলেও যাত্রীবোঝাই ফেরি ছেড়েছে এ ঘাট থেকে।

অনেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে ঘাটে আসছেন। তা নিয়েই সরাসরি ফেরিতে উঠছেন। দেখা গেছে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত কিছু গাড়িও।

রাজবাড়ী থেকে থেকে অটোরিকশায় দৌলতদিয়া ঘাটে আসা হুমায়ূনি কবির জানান, রবিবার থেকে অফিস খোলা বলে শুক্রবার জেনেছেন। তাই রাজধানীতে ফিরছেন। লকডাউনের কারণে পথে পথে ভোগান্তি হচ্ছে; টাকাও খরচ হচ্ছে বেশি। তারপরও যেকোনো উপায়ে তার পৌঁছাতে হবে ঢাকায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষুব্ধ যাত্রী জানান, হুট করে শুক্রবার জানানো হলো যে, রোববার থেকে কারখানা খোলা। হাতে সময় কম। তাই ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ফিরতে হচ্ছে রাজধানীতে। তাদের কারও কারও প্রতিষ্ঠানেরও চাপ এসেছে কাল থেকেই যোগ দেওয়ার।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৬টি ফেরিই প্রস্তুত আছে। দুই ঘাটে এখন চলছে ৮টি ফেরি। ‘যখন যে ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে ছাড়া প্রয়োজন, সেভাবেই ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর চাপ বেড়ে গেলে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে।’

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে শনিবার সকাল থেকে পোশাক ও কারখানার শ্রমিকদের ঢল দেখা গেছে। ১০টি ফেরিতে মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে যাত্রী, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল এসে নামছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে।

ঘাটের দিকে আসার সড়কে পুলিশের চেকপোস্ট ও ঘাট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকলেও যাত্রীদের চাপ কমেনি। শিমুলিয়া ঘাটে নেমে ছোট ছোট যানে করে ভেঙে ভেঙে ঢাকার দিকে রওনা হচ্ছেন তারা। মানবিক কারনে শ্রমিক ও কর্মীদের ব্যাপারে অনেকটা দেখেও না দেখার ভান করছে পুলিশ প্রশাসন। ফলে স্বাস্থ্যবিধি বলে কোন কিছুও থাকছেনা এই ঢাকা ফেরার লড়াইয়ে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (মেরিন) আহমেদ আলী জানান, শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজারগামী যাত্রীর সংখ্যা কম। তবে বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসা প্রতিটি ফেরিতেই চাপ রয়েছে।

তিনি জানান, ঘাটে গাড়ির চাপ না থাকায় যেসব গাড়ি পারাপারের জন্য আসছে, তাদের খুব একটা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। যাত্রীদের মধ্যে পোশাকশ্রমিকের সংখ্যা অনেক বেশি। তারা ঢাকায় যাচ্ছেন যেকোনো উপায়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement