মহামারী করোনার মাঝে সরকার ঘোষিত ৩৩৩ হটলাইন নম্বরে প্রতিদিন খাবারের জন্য ফোন করছেন ৪৩ হাজার ৩৪১ জন। তাদের মধ্যে দিনে গড়ে খাবার পেয়েছেন ১ হাজার ৭১২ জন। ৩৩৩ নম্বরে ফোন এলেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে দিনে ৪১ হাজার ৬২৯ জনকে খাবার দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই মহামারী করোনা নিয়ন্ত্রণে গত বছরের এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ শুরুর পর এখন দিনে ২ হাজার ২৭৪ জন মানুষ ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাবার চেয়ে কথা বলতে পেরেছেন। অন্যদিকে ৩৯ হাজার ৩৫৫ জন ৩৩৩ নম্বরে খাবারের জন্য ফোন করলেও কথা বলতে পারেন নি। সেখানকার কর্মকর্তারা জনবলসংকটের কারণে ৩৩৩-এর খাবার সহায়তার ইউনিট থেকে এদের ফোনে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. মোহসীন সীমাবদ্ধতার বিষয়টি মেনে নিয়ে বলেন, ‘৩৩৩-তে ফোন করে সহজেই যেন মানুষ কথা বলতে পারেন, আইসিটি বিভাগ সেটি নিয়ে কাজ করছে। সেখানে দায়িত্ব পালনকারী অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলতে দীর্ঘ সময় যাতে অপেক্ষা করতে না হয়, আমরা সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যেই এর সমাধান হয়ে যাবে।’
মহামারীর মধ্যে ৩৩৩ নিয়ন্ত্রণকারী এটুআই এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুলাই এই সময় পর্যন্ত ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৮৭২ জন মানুষ ৩৩৩-তে ফোন করে কথা বলেছেন। খাবার নিয়ে কথা বলেছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৯ জন এবং খাবার চেয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন। খাবার সহায়তা পাওয়ার বিষয়ে তথ্য জেনেছেন ৫৩ হাজার ১৮১ জন মানুষ।
যাঁরা হটলাইনে ফোন করে খাবার চেয়েছেন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে ইউএনওদের নিকট তাঁদের নাম-ঠিকানা পাঠানো হয়। ইউএনওরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে সত্যতা যাচাই করে খাদ্যসহায়তা দিচ্ছেন। খাদ্য সহায়তায় আছে চাল, ডাল, লবণ, তেল, চিনি ইত্যাদি। তবে যাদের আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও ৩৩৩-তে ফোন করে খাবার চেয়েছেন, তাঁদেরকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
৩৩৩-তে ফোন করে যাঁরা খাবার চেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকে গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৭টি পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে এ তথ্য জানা যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রের মাধ্যমে, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মা তিনি বলেন, ‘অভাবগ্রস্থ সবাইকেই খাবার দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো কোনো সময় দেখা যায় জমিজমা আছে কিন্তু ধান বা অন্যান্য ফসলের ফলন ভালো না হওয়ায় বা ব্যবসা মন্দা থাকায় ফোন করে খাবার চেয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমরা তাঁদের খাবার দিচ্ছি না।’ লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন এবং খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ইউএনও মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, অনেকেই খাবার পাচ্ছেন না কারণ খাবারের জন্য যাঁরা ফোন করেছেন তাদের যাঁচাই করে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
কোথায় জটিলতা?
তবে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি সেবার তথ্য, স্বাস্থ্যসেবা, ভূমিসেবা, জরুরি খাদ্যসহায়তা, নিত্যপণ্য ও ওষুধ কেনা এবং সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহায়তাসহ একাধিক সেবা পাওয়া যায়। এই হটলাইনে ফোন করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইভিআর সিস্টেমে তা রিসিভ হয়। তারপর যে যে বিষয়ে সেবা পেতে চান সেই শর্টকোড নম্বর চাপতে হয়। অন্যদিকে আবার এটুআইর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ৩৩৩ হটলাইনে অনেক হিট হওয়ায় তাঁরা সবার ফোনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু খুব দ্রুতই বিষয়টি সমাধানে তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন।
ঊর্ধ্বতন আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ৩৩৩ নম্বরে এখন দিনে এক লাখ ফোন আসছে। তার মধ্যে ৪১ শতাংশ মানুষ খাবার চেয়ে ফোন দিচ্ছেন। আমরা একটি মডেল তৈরি করেছি যেন সবার ফোন রিসিভ করা যায় সে জন্য। বাংলাদেশে যারা উদ্যোক্তা আছেন, তাঁদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে বাছাই করেছি। সেখান থেকে ৫০ জনকে নেওয়া হবে। ৩৩৩-এর খাদ্যসহায়তা ইউনিটে এখন ৪০ জন কাজ করছেন, তাদের সাথে আরও ৫০ জন যুক্ত হলে দিনে ২৫ হাজার জনের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হবে। আমরা আগামী ১ আগস্ট থেকেই দিনে ২৫ হাজার ফোন নিতে পারব।’
আরও একজন কর্মকর্তা জানান, ইউএনওরা যাতে ৩৩৩-এর কন্ট্রোল প্যানেলে ঢুকে সংশ্লিষ্ট এলাকার তথ্যগুলো দেখতে পারেন সে জন্য তাঁদের আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। কার কার এলাকার কত মানুষ খাবার চেয়ে ফোন করেছেন, নিজেরাই যেন সেই তথ্য দেখে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।