তামপাত্রা বৃদ্ধিতে ঘরের বাহির হলেই ঘেমে পুরো শরীর একাকার। শ্রমজীবী মানুষেরা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে রাতের বেলায় ঘুমাতে গেলেও যেন শরীরের ভেতরের গরম থেকেই যায়।
অনেকেই আবার খাওয়ার নিয়ম ও কোন খাবার খাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। আরও অনেক সমস্যার সম্মূখিন হয়ে পড়েন। তবে এ সময়ে খাবারে পরিবর্তন আনতে হবে। খেতে হবে শীতল ও সহজপাচ্য খাবার।
গরমে সতেজ থাকার খাবার সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.) আখতারুন নাহার আলো।
গরমে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম পটাশিয়াম বেরিয়ে যায় সে জন্য দুর্বলতা বোধ যেমন হয়। আবার পানিস্বল্পতা দেখা দেয়। সে জন্য তখন কিছুক্ষণ পরপর লবণ ও লেবুর রস দিয়ে পানি পান করা প্রয়োজন। দেহের ভেতরটাকে পরিশোধিত করে পানি। তখন তরমুজ, ইসবগুল,তুকমা, বেল, তেঁতুল, কাঁচা আম দিয়ে শরবত করে খাওয়া যেতে পারে।
আবার খাবারের সঙ্গে টকদই রাখতে পারলে ভালো হয়। টকদই শরীরে প্রোবায়োটিকের কাজ করে। শরীরকে সুস্থ অর্থাৎ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে।
তাছাড়া, তেঁতুল, ইসবগুলকাঁচা আম শরীরকে স্নিগ্ধ শীতল রাখে। আর গরমের সময় গুরুপাক খাবারে শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যার কারণে আরও গরম লাগে।
তাছাড়া বদহজম, অনিদ্রা, চেহারায় ক্লান্তির ছাপ, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা যায়। সে সময় ঝাল মসলা যত কম খাওয়া হয় ততো ভালো।
তবে দুপুর ও রাতের খাবারে ঠাণ্ডা সালাদ রাখলে ভালো হয়। তখন দুপুরে সব সবজি দিয়ে নিরামিষ খেলে ভালো হয়। ভাতের সাথে কামরাঙ্গা, আম, আমড়া, আনারস ইত্যাদির টক ছোট মাছের ঝোল, সুসিদ্ধ ডাল ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
সকালে খাবার তালিকায় সিদ্ধ ডিম, সাদা সবজি, চিড়া-কলা-দই, সিদ্ধ আটার পাউরুটি, জেলি, রুটি, নরম খিচুড়ি ইত্যাদি রাখা যেতে পারে। অনেকে আবার গরমের সময় পান্তাভাত খেতে পছন্দ করেন। পান্তাভাত শরীকে যেমন ঠাণ্ডা রাখে তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে তোলে। শরীর থেকে পানির অভাব দূর করে।
তবে দুপুরের তুলনায় রাতের খাবারের পরিমাণ কম হওয়া উচিত। কারণ রাতে মানুষের শারীরিক পরিশ্রম যেমন কমে যায় তেমনই বিপাক ক্রিয়ার হারও কম থাকে। তখন অনেকেরই পেট খারাপ বা পাতলা পায়খানাও দেখা যায়। গরমের সময় যেন পেটের গোলমাল যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গরমের সময় খাবার গ্রহণের কিছু টিপস-
- গরমের সময় শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় বলে খেতে হবে শসা, তরমুজ, আম, ডাব ইত্যাদি। তাছাড়া রয়েছে পানিজাতীয় সবজি যেমন লাউ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটোল অল্প তেলে রান্না করে খেতে হবে।
- তখন সব ধরনের মাছ অঙ্কুরিত-ছোলা-মুগ খেলে ভালো হয়।
- নিয়মিত প্রতিদিন লেবু বা লেবুর শরবত খাওয়া উচিত।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
- অরিক্তি তেলে ভাজা, পঁচা-বাসি খাবার খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
- তাজা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- বাহির থেকে বাসায় আসার পর অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি অথবা খাবার খাওয়া উচিত নয়। তাতে কিছুটা আরাম হলেও শরীরের তাপমাত্রা তারতম্যের জন্য ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।
- আবার হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য লবণ দিয়ে কাঁচা আম খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
- এ সময় ডাবের পানি খুবই উপকারী। ডাবের পানিতে আছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, ফসফরাস, ও ক্লোরিন।
- তরমুজ ফলটিও আমাদের সবার কাছে কমবেশি পরিচিত। তরমুজ তৃষ্ণা নিবারণে অব্যর্থ। তরমুজে আছে বিটা ক্যারোটিন, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও লাইক্লোপেন। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।