দেশে চলছে কঠোরতম বিধিনিষেধ। এবারের বিধিনিষেধে তৈরি পোশাকসহ সব ধরনের কারখানাও বন্ধ। আর এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামসহ দেশের বন্দরগুলোতে। কারন কারখানা বন্ধ থাকায় আমদানিকারক ও উৎপাদকরা কনটেইনার খালাসের আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সব বন্দর খোলা থাকলেও ঈদের ছুটি বা তার পরে কনটেইনার খালাসের হার খুবই কম। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই ভয়াবহ কনটেইনার জটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অবস্থা এড়াতে বন্দর কতৃপক্ষ কনটেইনার দ্রুত খালাসে ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।
জানা গেছে, ঈদের পরদিন থেকে গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় বন্দর থেকে পণ্যবোঝাই মাত্র ৩৯টি কনটেইনার খালাস করেছেন আমদানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় পণ্য খালাস করা সম্ভব নয়। আর বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, পণ্য খালাস না হলে তিন–চার দিন পরই ভয়াবহ জটের মুখে পড়বে বন্দর। তাতে বন্দরের কার্যক্রম সীমিত হয়ে যাবে। স্থবির হয়ে পড়তে পারে স্বাভাবিক কার্যক্রম।
এদিকে, কনটেইনার খালাসের হার কমলেও জাহাজ থেকে প্রতিনিয়ত নামানো হচ্ছে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার। তাতে প্রতি ঘণ্টায় বন্দর চত্বরে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের ছুটির আগের দিন বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৮১৯। এই সংখ্যা বেড়ে শনিবার রাতে হয়েছে ৪২ হাজার ৩৮৬। প্রতিদিন যদি গড়ে সাড়ে তিন হাজার কনটেইনার নামানো হয় তাহলে তিন–চার দিন পর বন্দর চত্বরে কনটেইনার রাখার জায়গা থাকবে না। জাহাজ থেকেও কনটেইনার নামানো যাবে না। কারণ, বন্দরের হাতে মোট ৪৯ হাজার ১৮টি কনটেইনার রাখার জায়গা আছে।
এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছে, বন্দর অভ্যন্তর থেকে কনটেইনার খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকলে আগামী দুই–তিন দিন পর বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী দুই মাসের জন্য রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনার ডিপোতে নিয়ে খালাসের অনুমতির ব্যবস্থা করা দরকার। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই চিঠি দেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান সাংবাদিকদের বলেন, বন্দরে যাতে জট তৈরি না হয়, সে জন্য বিকল্প হিসেবে কনটেইনার রাখার ব্যবস্থা করতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমদানিকারকেরা যদি পণ্য খালাস নেন তাহলে বন্দর সচল থাকবে। তিনি বলেন, খাদ্যপণ্যের কারখানা খোলা আছে। আবার কারখানা বন্ধ থাকলেও চত্বর বা গুদামে পণ্য নিতে পারেন আমদানিকারকেরা।
মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও চিঠি দিতে শুরু করেছে বন্দর। শনিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কাছেও চিঠি দিয়ে কনটেইনার জটের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ এর দু’জন নেতা কেটিভি প্রতিদিনকে বলেন, কারখানা বন্ধ রেখে পণ্য খালাস করা কঠিন। সরকার বন্দর–কাস্টমস ও ব্যাংক খোলা রেখেছে। কিন্তু যারা মূল ব্যবহারকারী সেই শিল্পকারখানাে এখন বন্ধ। তাদের মতে, বন্দর সচল রাখার জন্য কারখানা খোলা রাখা উচিত। কারণ, বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া কনটেইনারের ৩০ শতাংশই পোশাকশিল্পের কাঁচামাল।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে কনটেইনারে আমদানি হওয়া পণ্যের বড় অংশই পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি, বিলাসপণ্য ও বাণিজ্যিক পণ্য কনটেইনারে আমদানি হয়। বিধিনিষেধের আওতামুক্ত রাখা খাদ্যপণ্য, ওষুধের মতো পণ্য তৈরির কাঁচামালের হার খুবই কম।
কঠোর বিধিনিষেধের সময় জীবন বাঁচানোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আবার অর্থনৈতিক কার্যক্রমও যাতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে না পড়ে, সেদিকেও খেয়াল রাখার কথা বলছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
চট্টগ্রামের সিএন্ডএফ এজেন্ট নওশাদ মাহমুদ চৌধুরী রানা কেটিভি প্রতিদিনকে বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় জীবন যেমন বাঁচানো জরুরি, দেশের শিল্পখাতও বাঁচাতে হবে। আমদানিকারকরা পণ্য খালাস করতে চাইছেন না। তারা বলছেন কারখানা বন্ধ রেখে কাঁচামাল নিয়ে ব্যবহার না করে রাখাও তাদের জন্য বাড়তি লোকসানের। বিষয়গুলো নিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্টরাও বন্দর কতৃপক্ষ এবং আমদানিকারকদের দ্বিমুখী চাপে পড়েছেন। তবে কনটেইনার জট হলে তার ভোগান্তি সবাইকেই পোহাতে হবে বলে মনে করেন তিনি।