১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, শনিবার

ভাড়ার গাড়ি বিক্রি করে কোটিপতি!

Advertisement

ভুয়া পোশাক কারখানার জন্য গাড়ি ভাড়া নিয়ে তা মালিককে না জানিয়ে বিক্রি করে চারমাসের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে আব্দুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদী নামে এক ব্যক্তি। প্রতারক এই ব্যক্তিকে তার সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। উদ্ধার করা হয়েছে তার বিক্রি করা গাড়িও।

আজ সোমবার দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে পুলিশের এই ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

সিআইডি কর্মকর্তা মুক্তা ধর বলেন, ‘আব্দুল কাইয়ুম ছোটন ওরফে ইশতিয়াক ওরফে মেহেদীর গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া এলাকায়। তিনি কক্সবাজারে প্রত্যাশা নামে একটি এনজিওতে কাজ করতেন। প্রতারণার জন্য সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হন। এরপর ঢাকায় এসে গাজীপুর বোটবাজার এলাকার শহীদ সিদ্দিক লেনের ৫৮৫ নম্বর চার তাল বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘একে ফ্যাশন’ নামে একটি পোশাক কারখানা চালু করেন। কারখানার মেশিন সব ভাড়া নেন। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ২১০ জন শ্রমিক নিয়ে পোশাক কারখানাটি চালু করেন। কারখানায় টি-শার্ট, পোলও শার্ট, প্যান্ট ও জ্যাকেট তৈরি হতো।’

এর তিন-চার মাসের মাথায় ছোটন ফেসবুকের বিভিন্ন ‘রেন্টে কার’ পেজে গাড়ি ভাড়া নেবেন বলে বিজ্ঞাপন দেন বলে জানান মুক্তা ধর। তিনি বলেন, এরমধ্যে রেন্টে কার বিডি, রেন্টে কার গাজীপুর ও রেন্টে কার ঢাকা পেজে বেশি বিজ্ঞাপন দেন। বায়ারদের জন্য ভাড়া করা এসব গাড়ি নেওয়া হবে বলে বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন ছোটন।

গাড়ির মালিকদের তিনি তার গাজীপুরের পোশাক কারখানায় যেতে বলেন। গাড়ির মালিকরা গেলে তাদের সঙ্গে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। বিলাস বহুল দামী গাড়ি মাসিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন ছোটন। তবে তিনি গাড়ির মালিকদের শর্তদেন, বায়ারদের নিয়ে যেহেতু রাতে চলাচল করতে হবে। তাই গাড়িতে তার নিজের চালক থাকতে হবে, গাড়ির মালিকের দেওয়া চালক তিনি নেবেন না। ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি ধরলে আসল কাগজপত্র দেখাতে হবে, তাই গাড়ির সকল আসল কাগজপত্র রেখে দেন তিনি। ছোটনের কথায় গাড়ির মালিকরা সব শর্তে রাজি হন। গাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর প্রথম মাস মালিকদের ভাড়া ঠিকমতোই দিতেন ছোটন।

বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, পরের মাস থেকে নয়ছয় শুরু করেন কথিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ছোটন। এমনকি মালিককে না জানিয়ে গাড়ি বিক্রিও করে দেন। গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে আমরা জিজ্ঞাসাবাদে জেনেছি, তিনি ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। গাড়ির কন্ডিশন দেখে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। সেগুলো পরবর্তীতে নকল কাগজপত্র তৈরি করে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে বিআরটিএ অফিস বন্ধ থাকায় ক্রেতারা এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে পারেননি।’

তিনি আরও বলেন, আলমগীর নামে একজন সহযোগী রয়েছে ছোটনের। তিনি এসব গাড়ি বিক্রি করতে সহযোগিতা করতেন। এছাড়াও তুরাগ থানার নাজমুল অটোপাস সেন্টারও গাড়ি বিক্রি করে দিতো। ১৯ লাখের গাড়ি ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি করা হতো। এই প্রতারণা তারা মার্চ ও এপ্রিল মাসে বেশি করেন।

গাড়ির বিক্রির সময় ছোটন ক্রেতাদের বলতো, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, তাই গাড়ি বিক্রি করে দিবেন। এভাব চারমাসে তিনি ২৫ থেকে ৩০টি গাড়ি বিক্রি করেছেন। পরবর্তী সময়ে গাড়ির বিক্রির ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।’

এসব ঘটনায় গাজীপুর ও ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা মামলা করেছেন। সিআইডি তদন্ত করতে নেমে চক্রের পুরো সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করেছে বলেও জানান মুক্তা ধর।

ছোটনের সহযোগী আব্দুল হাই, আলমগীর, নাজমুল ও সানীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও চোরাই গাড়ি যারা ক্রয় করেছে তাদের মধ্যে রানা ও শামীম নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোট সাতটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।

এর মধ্যে অনেক ক্রেতা যখন জানতে পেরেছেন তারা চোরাই গাড়ি কিনেছেন, তখন তারা নিজেরাই থানায় জিডি করে এর মালিককে পুনরায় গাড়ি ফেরত দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement