চলতি (আগস্ট) মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত জাপানি দুই শিশুকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেখানে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা ও প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। শিশুদেরকে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির করতে হবে। সে (৩১ আগস্ট) দিন আদালত পরবর্তী আদেশ দেবেন। ৩১ আগস্টের মধ্যে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখতে বলেছেন।
আজ সোমবার (২৩ আগস্ট) এ আদেশ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে শিশুদের জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম। এর পুর্বে সকালে আদালতের আদেশে হাজির করার নির্ধারিত দিনের (৩১ আগস্ট) আগেই জাপানি দুই শিশুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনেন তাদের বাবার আইনজীবী ফাওজিয়া করিম।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গতকাল রোববার (২২ আগস্ট) ১০ ও ১১ বছর বয়সী মেয়ে দুটিকে হেফাজতে নেয় ।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) হাইকোর্ট দুই জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। সেই সাথে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই দিন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ।
গত বৃহস্পতিবার সকালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬) দুই কন্যা সন্তানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স কর্পাস আবেদন করেন। ওই নারী রিটে দুই কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। ১২ বছরের সংসারে তাদের তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারপর ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান-এরিকোর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে এক দিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
তারপর গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর নিকট থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।
তারপর আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। তখন ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। তারপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ২১ ফেব্রুয়ারি।
তারপর গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। কিন্তু দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। তারপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রিলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশে আসার পর এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তার রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তার সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।