দেশে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের মাঝে বাড়তি আতঙ্ক যোগ করেছে ডেঙ্গুজ্বর। ঘরে ঘরে জ্বর-জারি লেগেই আছে। হাসপাতালগুলোতে এমনিতেই করোনা রোগীর ঠাঁই নেই। এরই মাঝে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকায় জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকির মুখে পড়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
কোনটি করোনা রোগী আর কে ডেঙ্গু আক্রান্ত, তা সঠিকভাবে অনুধাবন করা জরুরি। করোনা ও ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে পার্থক্য না বুঝলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে জীবননাশও হতে পারে। অনেকদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে থাকলে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট কমতে থাকে। ফলে বিপদ হতে পারে।
এসব বিষয়ে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টার ক্যান্ডিডেট- ডা. জান্নাতুল মাওয়া ডানা (এম.পি.এইচ) বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। সাধারণভাবে ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণই হচ্ছে ‘তীব্র জ্বর’ (১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। একটানা মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থল ও মাংসপেশির ব্যথা, বমি কিংবা বমিভাব থাকবে। এছাড়া ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি দেখা যেতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশু এবং তরুণদের তীব্র উপসর্গ নাও থাকতে পারে।
ডেঙ্গু ও করোনার পার্থক্যঃ
ডেঙ্গু ও করোনা উভয় অসুখেই প্রায় একই লক্ষণ- জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যথা, খাবারে অরুচি ইত্যাদি। তবে ডেঙ্গুতে সাধারণ করোনা রোগীর মতো শ্বাসকষ্ট ও ঘ্রাণ না পাওয়ার মতো লক্ষণগুলো থাকে না। বরং জ্বর শুরুর কিছুদিন পরই শরীরে লাল অ্যালার্জির মতো দাগ দেখা যেতে পারে।
ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে করণীয়ঃ
ডেঙ্গুর বাহক- এডিস মশা দীর্ঘদিন জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত খালি কৌটা, যে কোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি ৩-৫ দিন পরপর ফেলে দিতে হবে। তাহলে মশার লার্ভা মারা যাবে। পানি জমে থাকা পাত্রটি ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করে পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম নষ্ট করে দিতে হবে। ঘরের অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং মুখ খোলা পানির ট্যাংকগুলোতে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না।
এডিস মশা মূলত সকাল ও সন্ধ্যা ও দিনের বেলা কামড়ায়। তবে রাতে উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলোতেও এ জাতীয় মশা কামড়াতে পারে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে দিনে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে ঘরের দরজা ও জানালায় নেট লাগিয়ে নেওয়া উচিত। যথাসম্ভব শরীর ঢাকা পোশাক পড়ে থাকা ভাল। মশার হাত থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল ম্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি হাসপাতাল ও অফিস-আদালতের আনাচকানাচে মশার স্প্রে ব্যবহার করা উচিত।
প্রচুর পরিমাণে তরল খাবর যেমন- ফলের রস, শরবত, ডাবের পানি ও স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে দ্রুত রোগমুক্ত হওয়া যায়। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রামও নিতে হবে। বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন। তবে অবহেলা করলে ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুও হতে পারে। নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হলে, মল অথবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত গেলে কিংবা প্রচণ্ড পেট ব্যথা ও অনবরত বমি হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
মাথায় রাখতে হবে যে নিশ্চিত না হয়ে কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাসপিরিন বা অন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় ডেঙ্গু নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করা যাচ্ছে।
যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি পালন করে চললে করোনা অতিমারি ও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ থাকা সম্ভব। আসুন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করি।