পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও বেশ জনপ্রিয় একটি শাক হচ্ছে পালংশাক। অন্যান্য সবজির তুলনায় এ সবজি অধিক ভিটামিনসমৃদ্ধ। তবে বাংলাদেশে শীতকালে পালং শাক চাষ করা হয়।
পালং শাকের উপকারিতা:
কমবেশি প্রায় সবারই প্রিয় পালং শাক। পালং শাক অনেকে রান্না করে ঝোল স্যুপের মতো করে খায়। পালং শাক ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়, রান্না করেও মাছের সঙ্গে খাওয়া যায় সহজেই। এ শাক খেলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, ঠিক তেমনি রোগ-ব্যাধি সারাতেও এই শাকের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ শাক শরীরের অন্ত্র সচল রাখতেও সাহায্য করে। সহজে বের করে দেয় অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল। পালং শাকের বীজও খুব উপকারী। পালং শাকের বীজের ঘন তেল কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায়। এ শাকের কঁচি পাতা ফুসফুস, শরীর জ্বালাপোড়া ও কণ্ঠনালীর সমস্যা ইত্যাদি দূর করতেও ভালো কাজ করে। শরীর ঠান্ডা রাখে পালং শাক। যারা জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী তাদের জন্য এই শাক বিশেষ উপকারী। এই শাক রক্ত বৃদ্ধি ও পরিষ্কারক খাদ্য। তাছাড়াও চোখের জ্যোতি ও মুখের লাবন্য বৃদ্ধি করে। ক্ষতস্থানে, পোড়া ঘায়ে, ব্রনে বা কোথাও কালশিরা পড়লে টাটকা পালং পাতার রসের প্রলেপ লাগালে ভালোই উপকার পাওয়া যায়।
পালং শাকের পুষ্টি তালিকা :
১০০ গ্রাম পালং শাকে ২.০ গ্রাম প্রোটিন, ২.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৭ গ্রাম আঁশ, ১১.২ মি. গ্রাম আয়রন, ২০.৩ মি. গ্রাম ফসফরাস, ০.৫ মি. গ্রাম অ্যাসিড (নিকোটিনিক), .০৮ মি. গ্রাম রিবোফ্লোবিন, ৬৫২ মি. গ্রাম অক্সালিক অ্যাসিড, ৭৩ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২০৮ মি. গ্রা পটাশিয়াম, ৯৩০০ আই. ইউ ভিটামিন-এ, ২৭ মি. গ্রা ভিটামিন সি, .০৩ মি. গ্রা থায়ামিন। আগে বাজারে টক পালংও কিনতে পাওয়া যেত। এখন তা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পালং শাক শিশুদের জন্য বিশেষ উপকারী।
পালংশাকের জাত:
কপি পালং, পুষা জয়ন্তী, গ্রিন, সবুজ বাংলা ও টকপালং। এছাড়া আছে ব্যানার্জি জায়েন্ট, নবেল জায়েন্ট, পুষ্প জ্যোতি ইত্যাদি।
মাটি:পালং শাক চাষের বেশি উপযোগী উর্বর মাটি দোআঁশ। তাছাড়াও এঁটেল, বেলে-দোআঁশ মাটিতেও চাষ করা যায়।
পালং শাক চাষর জন্য জমি তৈরি:
জমি চাষ ও মই দিয়ে মাটি খুব মিহি করে প্রস্তুত করতে হবে।
সারের নাম এবং শতক প্রতি পরিমান
৪০ কেজি গোবর
১ কেজি ইউরিয়া
৫০০ গ্রাম টিএসপি
৫০০ গ্রাম এমপি
সার প্রয়োগের নিয়মাবলি:
১। ইউরিয়া সার ছাড়া সব সার জমির শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়। জমি তৈরির প্রথম
দিকে গোবর প্রয়োগ করাই উত্তম।
২। চারা গজানোর ৮-১০ দিন পর থেকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ইউরিয়া সার।
আল নির্বাচন ও তৈরি:
পালংশাক জমিতে আল তৈরি করেও চাষ করা যায়। উঁচু আল নির্বাচন করা হয় পালংশাকের জন্য। তবে উঁচু আলে কিছুটা আগাম পালংশাক বীজ বপন করা
জমিতে সার প্রয়োগ:
প্রয়োজন মতো গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া, এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে পালংশাকের জমিতে।
জমিতে বীজ বপনের হার:
৩৫-৪০ গ্রাম প্রতি আলে
১১৭ গ্রাম প্রতি শতকে
৯-১১ কেজি প্রতি একরে
২৫-৩০ কেজি প্রতি হেক্টরে
বীজ বপনের সময়:
সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস।
বীজ বপনের দূরত্ব:
একটি বীজ থেকে আরেকটি বীজের দূরত্ব থাকবে ১০ সেমি। ছিটিয়েও বীজ বপন করা যায়।
পরিচর্যা: আগাছা নিধন
আগাছা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে জমি থেকে তুলে ফেলতে হবে।
সার উপরিপ্রয়োগ:
নিয়মানুযায়ী সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে সময় মতো।
সেচ প্রয়োগ:
পালং শাক চাষের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। আর এজন্য সারের উপরিপ্রয়োগের আগে মাটির ‘জো’ অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। আবার চারা রোপণের পর হালকা সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
মাটি আলগাকরণ:
গাছ দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাটিতে বেশি দিন রস ধরে রাখা এবং মাটিতে সহজেই যেন আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেজন্য প্রতিবার পানি সেচের পর জমির উপরের মাটি আলগা করে দিতে হয়।
পালং শাক চাষে ক্ষতিকর পোকামাকড়:
মাঝে মাঝে উরচুঙ্গা, পিপঁড়া, উইপোকা এবং পাতাছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যদি গাছ এরকম পোকার দ্বারা আক্রমণ হয় তাহলে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হয়।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
১) গোড়া পচা রোগ
২) পাতার দাগ রোগ
৩) পাতা ধ্বসা রোগ।
তাছাড়াও পালংশাকে আরও দুইধরনের রোগ দেখা যায়। যেমন-পাতায় দাগ, ডাউনি মিলডিউ।
ফসল সংগ্রহ:
পালংশাক সংগ্রহ করা যায় বীজ বপনের এক মাস পর থেকে আবার গাছে ফুল না আসা পর্যন্ত যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়।
ফলন:
৮-১০ কেজি প্রতি আলে
২৮-৩৭ কেজি প্রতি শতকে
২৮০০-৩৮০০ কেজি প্রতি একরে
৭-৯ টন প্রতি হেক্টরে