আগামীকাল রবিবার খুলছে পোশাক কারখানা। শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় হাজার হাজার শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে ফিরতে শুরু করেছেন। গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে, রিকশাভ্যানে, পিকআপ, ট্রাক ও ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ও রিকশায় কয়েকগুন বাড়তি ভাড়া গুনে বাড়ি থেকে রওয়া হয়েছেন।
যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে ছুটছেন গন্তব্যের পথে। আবার অনেকে গাড়ি পাওয়ার আশায় বিভিন্ন স্ট্যান্ডে ও সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছেন দীর্ঘক্ষণ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি থাকলেও এসব শ্রমিকের কাছে চাকরি রক্ষা করাটা বেশি প্রয়োজন বলে জানান তারা। মৌসুমী বৃষ্টি কাদা তাদের ভোগান্তিকে চূড়ান্ত মাত্রায় নিয়ে গেছে। আর এর মধ্যে করোনা মহামারির স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টা মাথায়ই নেই কারও।
আজ শনিবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায় পোশাক শ্রমিকদের ভিড়। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহের নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছেন তারা। পায়ে হেঁটে, রিকশায়, অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকার দিকে যাচ্ছেন।
যেখানে নির্দেশনা রয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার, সেখানে শ্রমিকেরা গাদাগাদি করে রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে চড়ে গন্তব্য রওনা হচ্ছেন। গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় যানবাহনের জন্য অপেক্ষমাণ বেশ কয়েকজন পোশাক শ্রমিক জানান, করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও ও চাকরি হারানোর ভয়ে আজই ঢাকায় যাচ্ছেন তারা। এ পর্যন্ত কয়েকটি গাড়ি পরিবর্তন করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
হঠাৎ শ্রমিকদের ঢাকা ফেরার ঢলকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে ছোটখাট বাহনের চালকরা। ২০ টাকার রিকশা ভাড়া হাঁকা হচ্ছে ২০০ টাকা। ৫০ টাকার অটোরিকশা ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে শিশু, পরিবার পরিজন নিয়ে সম্বলটুকু শেষ করে ঢাকায় ফিরছেন। চাকরি যে তাদের রাখতেই হবে বাঁচতে হলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য উৎপাদন করে শিপমেন্ট না করতে পারলে এয়ার শিপমেন্ট করতে হবে। এতে প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।’
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাজারও শ্রমিক আসছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। পরিবহন বন্ধ। এর মধ্যে যে কয়েকটা ছোট ছোট পরিবহন সড়কে আছে, সেখানে ভিড়ের জন্য পা ফেলা যাচ্ছে না। এর মধ্যেও আমরা তাদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। মাইকিং করছি, হাত ধোয়ার, মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি। আজকের পর ভিড় থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।’