৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, রবিবার

রাজধানী কাবুলের খুব কাছে তালেবান, আমেরিকান দূতাবাসের নথি ধ্বংস

Advertisement

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের খুব কাছাকাছি এলাকায় চলে এসেছে দেশটির বিদ্রোহী জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবানের সদস্যরা। শনিবার কাবুলের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অভিযান শুরু করেছে এই বিদ্রোহীগোষ্ঠী। তাদের লাগাতার অভিযানের মুখে রাজধানী অভিমুখে বেসামরিক নাগরিকদের ঢল শুরু হয়েছে।

তালেবান অপ্রতিরোধ্য গতিতে রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মীদের জরুরিভিত্তিতে ফিরিয়ে নিতে আমেরিকান সৈন্যরা কাবুলে পৌঁছেছেন।

দেশটির দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম শহর তালেবানের হাতে পতন হওয়ায় এখন রাজধানী কাবুল কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইরত সরকারি বাহিনীর সদস্যরা কোনও ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। স্থানীয় একজন আইনপ্রণেতা বলেছেন, বর্তমানে রাজধানী কাবুল থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দক্ষিণের চার আসিয়াব জেলায় পৌঁছেছে তালেবানের সদস্যরা।

এমন পরিস্থিতিতে তালেবানের পুরোমাত্রার আক্রমণের ভয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাসের কর্মীদের তড়িঘড়ি করে ফিরিয়ে নেওয়া কাজ শুরু করেছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলের মাজার-ই-শরিফের আশপাশে তুমুল লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। এই অঞ্চলে প্রবল তালেবানবিরোধী ও দেশটির যুদ্ধবাজ এবং সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট আবদুল রশিদ দস্তুম তার মিলিশিয়া বাহিনীকে সংঘবদ্ধ করেছেন।

এখনও যেসব গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল তালেবানের দখলে যায়নি সেসবের মধ্যে আছে জালালাবাদ, গার্দেজ এবং পশতুন অধ্যুষিত খোস্ত। তবে এসব অঞ্চলেও তালেবানের বিরুদ্ধে খুব বেশি প্রতিরোধের সম্ভাবনা নেই।

এদিকে, আমেরিকান দূতাবাসের স্পর্শকাতর নথিপত্র এবং সরঞ্জাম ছিঁড়ে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দূতাবাসের কর্মী এবং মার্কিন নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আফগানিস্তানে তিন হাজার সৈন্য পুনরায় মোতায়েন করেছে দেশটি।

এছাড়া ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের জার্মানি, ডেনমার্ক এবং স্পেন শুক্রবার আফগানিস্তানে নিযুক্ত নিজেদের দূতাবাসের কর্মীদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। দেশজুড়ে তালেবানের আগ্রাসন বৃদ্ধি পাওয়ায় লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়ের আশায় কাবুলের দিকে ছুটছেন। ইতোমধ্যে কাবুলের চারপাশে লাখ লাখ মানুষ খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।

কাবুলের পার্শ্ববর্তী পারওয়ান থেকে দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে পালিয়ে এসেছেন ৩৫ বছর বয়সী নারী মুঝদা। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুবই আতঙ্কিত।

‘আমি দিন-রাত কাঁদছি। অতীতে আমি বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি… এখন যদি তালেবানরা এসে আমাকে বিয়ে করতে বাধ্য করে তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো।’

এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তালেবানদের দখলকৃত এলাকায় নারীদের সঙ্গে যে ধরনের দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে তা ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান। সেসময় দেশটিতে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে সশস্ত্র এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

চলতি বছর ২০ এপ্রিল আফগানিস্তান থেকে সব আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছিলেন, ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। পরে এই সময়সীমাকে আরও এগিয়ে ৩১ আগস্ট করা হয়।

বাইডেনের এই ঘোষণার পর থেকেই নতুন উদ্যমে আফগানিস্তান পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়ে আসার অভিযান শুরু করেছে কট্টরপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের ১৮ টিরই পতন হয়েছে তালেবানগোষ্ঠীর হাতে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement