তালেবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তালেবানের কাছে পূর্ব-তুর্কিস্তানের ইসলামিক আন্দোলন দমনে সহায়তা চেয়েছেন। তালেবান প্রতিনিধি দল এ ব্যাপারে চীনকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে চীনের বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ড তারা চলতে দেবে না।
আফগানিস্তানের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান বলেছে, আফগানিস্তানের ভূমিকে চীনের বিরুদ্ধে কোনোভাবেই ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তালেবানের এই আশ্বাসের জবাবে আফগানদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন।
তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল দুই দিনের সফরে চীনে রয়েছে। বুধবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে তালেবানের ওই প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। সফররত তালেবান প্রতিনিধি দলকে চীন বলেছে, বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী আফগানিস্তান যুদ্ধের অবসান এবং দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করে বেইজিং।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, চীন মনে করে আফগানিস্তান অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে তার ধাক্কা জিনজিয়াং প্রদেশে গিয়েও লাগবে। প্রদেশটিতে লাখ লাখ সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে।
চীন তুর্কিস্তানের ইসলামি আন্দোলনকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি মনে করে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি তাদের পশ্চিমের জিনজিয়াং অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসলে তুর্কিস্তানের বিদ্রোহীরা আরও সক্রিয় হতে পারে। এ কারণে আগেভাগে তালেবানের সহায়তা কামনা করছে চীন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তালেবানের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে দেশটির উত্তরের শহর তিয়ানজিনে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া এবং উভয় দেশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হয়।
আফগানিস্তানের সঙ্গে চীনের সীমান্ত যোগাযোগ রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে আফগানিস্তান-চীনের একমাত্র সীমান্ত শহর ওয়াখান দখল করে নেয় তালেবান। এক টুইট বার্তায় তালেবান মুখপাত্র নাইম জানান, বেইজিংয়ের তরফ থেকে তালেবানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সফরে তালেবান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সংগঠনটির উপপ্রধান নেতা মোল্লা বারদার আখুন্দ।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভিত্তি মজবুত করতে তালেবান নানা পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সশস্ত্র এ গোষ্ঠীর কাতারে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয়ও রয়েছে। শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে সেখানে বহুবার আলোচনা করেছে তালেবান। চলতি মাসেই ইরানে আফগান সরকারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা আছে তালেবানের।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে তালেবান মুখপাত্র মুহাম্মদ নাইম জানিয়েছেন, চীন বলেছে, আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তারা হস্তক্ষেপ করবে না, তবে সমস্যা সমাধান করে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে বেইজিং প্রস্তুত।