২১ জানুয়ারি, ২০২৫, মঙ্গলবার

দেশে মৃত্যুর হার ভারতের চেয়ে বেশি

Advertisement

টানা চার দিন পর, বাংলাদেশে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আবারও ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এই করোনাভাইরাসে।

করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় মধ্যে তৃতীয়। বর্তমান এই মৃত্যুর হার প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা সাপেক্ষে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ধারণা করা হয় যে মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। গত মার্চ এর আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এরপরই মৃত্যুর হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে।

গত মে মাসে ঈদুল ফিতরের পর থেকেই বাড়তে শুরু করে করোনা সংক্রমণ। এবং জুন মাস থেকে দ্রুত অবনতি হতে থাকে পরিস্থিতি। এখন পর্যন্ত করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মারা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, সেখানে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। মৃত্যুর সংখ্যার তালিকায় বিশ্বে ভারতের অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে চার লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে- ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে এই মৃত্যুর হার- ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এর পরই এই অঞ্চলে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভুটান এখন পর্যন্ত অনেকটাই নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, দেশটিতে ২০ জুলাই পর্যন্ত করোনায় মাত্র দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ জনের।

চার দিন পর আবারও মৃত্যু দুই শতাধিকঃ
দেশে ৯ জুলাই থেকে ২০ জুলাই এর মাঝে দুইদিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যু ছিল দুই শতাধিক। গত ২১ জুলাই থেকে পর পর চার দিন দৈনিক মৃত্যু ছিল ২০০- এর নিচে। গতকাল সেটি আবারও ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২২৮ জনের। এ নিয়ে মোট ১৯ হাজার ২৭৪ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঈদুল আজহার ছুটির কারণে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা কম ছিল। ফলে গত চার দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও ছিল কম। পরীক্ষা বাড়ার সাথে সাথে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৮৭ জনের। এর মধ্যে ১১ হাজার ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা- ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫। এবং করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন।

গত মে মাস থেকে করোনার ডেল্টা ধরনের কারণে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে এ সংক্রমণ। গত বছরের মার্চে সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রতিনিয়ত ঢাকা জেলা ও ঢাকা বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি ছিল। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগেও মৃত্যু সংখ্যা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। রাজশাহীতে মৃত্যু এখন কিছুটা কমে আসলেও খুলনায় পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।

জেলাওয়ারি হিসাবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ২০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। তবে ঢাকাতে মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম (১ দশমিক ০৩ শতাংশ)। গতকাল পর্যন্ত দেশে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি ছিল চাঁদপুরে (৪ দশমিক ৫২ শতাংশ)।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জারি করা দুই সপ্তাহের বিধি-নিষেধের তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। মাঝখানে প্রায় আট দিন বিধি-নিষেধ শিথিল ছিল। ঈদের পর গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে নতুন করে আবারও দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। তবে নতুন রোগীর সংখ্যা কমছে না। ঢাকার বাইরে জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বিধি-নিষেধের পাশাপাশি গ্রাম, শহর- সব জায়গায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশেন (বিচ্ছিন্ন রাখা) রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, শতভাগ মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করা সহ রোগী ব্যবস্থাপনা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এখনই সাবধান না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement