দেশের ৫৭টি জেলা পরিষদে সোমবার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ২৬টিতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দুপুর ২টায় শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩টি জেলার ফলাফল পাওয়া গেছে।
ফরিদপুর : ফরিদপুরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শাহাদাত হোসেন (চশমা)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন।
রাজশাহী : রাজশাহী জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। কাপ-পিরিচ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৫৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আক্তারুজ্জামান আক্তার পেয়েছেন ৫৬৬ ভোট। মোটরসাকেল প্রতীকে লড়ছিলেন তিনি। ভোট গণনা শেষে মীর ইকবালকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১ হাজার ১৮৫ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৭৫ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ৯টি ভোটকেন্দ্র ও ১৮টি কক্ষে ভোটগ্রহণ চলে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পদে ১৮ জন এবং ৩৯ জন সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
রাজবাড়ী : রাজবাড়ী জেলা পরিষদ নির্বাচনে পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ (তালগাছ) প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন অফিসার মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম শফিকুল মোরশেদ আরুজ (তালগাছ) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪২৮টি ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দীপক কুন্ডু (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৩৮ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমামুজ্জামান চৌধুরী রিটু(আনারস) প্রতীক নিয়ে পেয়েছে ২৮ ভোট।
নরসিংদী : নরসিংদীতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ইশরাত উদ্দিন আহমেদ মনির আনারস প্রতীক নিয়ে ৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এই জেলায় মোট ৩টি আসন বা পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৬ জন প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৩ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নড়ছেন ১০ জন।
খুলনা : খুলনা জেলা পরিষদে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শেখ হারুনুর রশীদ। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমএম মোর্ত্তজা রশিদী দারা চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪০৩ ভোট। আর ডা. শেখ বাহারুল আলম আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৭ ভোট।
(১৭ অক্টোবর) সোমবার বিকেলে ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এদিন বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন আনারস প্রতীকে ৪৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (চশমা) কে এম বজলুল হক খান পেয়েছেন ৪২৫ ভোট। (১৭ অক্টোবর) সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (তালগাছ প্রতীক) আবু বকর সিদ্দিক নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আতাউর রহমান সরকার আতা (ঘোড়া প্রতীক)।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল হান্নান শেখ। তিনি পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীক নিয়ে ২৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তোয়াবুর রহমান। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৩১ ভোট।
যশোর : যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের সাইফুজ্জামান পিকুল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আনারস প্রতীকের মারুফ হোসেন কাজল।
নড়াইল : নড়াইল জেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে ২৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত চয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির। মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৭৫ ভোট।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলাম (চশমা)।
নেত্রকোণা : নেত্রকোণা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট অসিত কুমার সরকার সজল (আনারস)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আসমা আশরাফ।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন আ.লীগ মনোনীত মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ নজরুল ইসলাম। তিনি পেয়েছেন ৬০৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খলিলুল্লাহ্ ঝড়ু পেয়েছেন ৪৪৭ ভোট। ১৬১ ভোট বেশি পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
জেলার সাতটি উপজেলার ১২টি ভোটকেন্দ্রে ১০৫৯ ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ১০৫৫ জন। বিজয়ী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। নির্বাচনকে ঘিরে জেলার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, দেশে দ্বিতীয়বাবের মতো জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে ভোট নেওয়া হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। সব কটি ভোটকেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
ইসি জানিয়েছে, ২৬ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ছাড়াও নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ১৮ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নোয়াখালী জেলা পরিষদ নির্বাচন আদালতের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে। ভোলা ও ফেনী জেলা পরিষদের সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই দুই জেলায় ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না।
ইসি জানিয়েছে, আজকের নির্বাচনে ৫৭টি জেলার চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী ৯২ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ৪৮৫ জন এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত পদে ৬০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৭টি জেলায় মোট ভোটার ৬০ হাজার ৮৬৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৬২টি এবং ভোটকক্ষ ৯২৫টি।