১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, শনিবার

গ্রামেই তিনটি বিয়ে হয়েছিল পরীমণির, প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়নি এখনো!

Advertisement

আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি বড় হয়েছেন পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের শিংখালী গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে। তার পুরো নাম শামসুন নাহার স্মৃতি। তার নানারা খুবই গরিব ছিলেন। সেখানে এসএসসি পাসের পর খালাত ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম বিয়ে হয় পরীমনির।

পরীমনির নানা শামসুল হক গাজী সাংবাদিকদের জানান, পরীমনির মায়ের মৃত্যুর পর তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। সে আমাদের বাড়িতে থেকে স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া করে। অত্যন্ত মেধাবী ছিল সে। গরিব হওয়ায় কোনো প্রাইভেট পড়তে পারেননি পরীমনি। তারপরও তিনি ভগিরাতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়।

শামসুল হক জানান, প্রথমবার ফেল করলেও দ্বিতীয়বার এসএসসি পাশ করে। পরে স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হলেও বরিশালে থাকা খালাতো ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। সেখানে ২ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর বিচ্ছেদ হয়।

স্থানীয়রা জানান, উচ্ছৃঙ্খল জীবনের জন্য খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ২০১৯ সালে দ্বিতীয় ও ২০২০ সালে তৃতীয় বিয়ে হয় পরীমনির।

বুধবার বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও মাদকসহ চিত্রনায়িকা পরীমণিকে আটক করে র‌্যাব। এরপর বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় আদালত ইতোমধ্যে তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

পরীমণির গ্রেফতারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। বাংলাদেশের এই এলিট ফোর্সের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার নাম শামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি।

পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তিনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও ৫-৭টি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকার সিনেমা জগতে আনেন প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। এরপর ঢাকার জীবনে রাতারাতি বদলে যান পরীমণি। রাতের ক্লাব, আড্ডা, বার, ডিসকো এমনকি পর্নো মুভি চক্রের সঙ্গেও তিনি জড়িয়ে যান বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীমণি বিয়ে

এদিকে, নায়িকা পরীমণির ‘প্রথম স্বামী’ যশোরের কেশবপুরের ফেরদৌস কবীর সৌরভ দাবি করেছেন, ২০১২ সালের জুলাই মাসে শামসুন্নাহার স্মৃতির সাথে (পরীমণির তখনকার নাম) তার বিয়ে হয়। পরে পরীমণির একাধিক বিয়ে হলেও তাদের এখনও ডিভোর্স হয়নি।

সৌরভ গণমাধ্যমকে বলেন, ২ বছর সম্পর্কের পর ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল কেশবপুর শহরের অফিস পাড়ায় ফতেমা মঞ্জিলে পৌরসভার এমএমআরও কাজী এম ইমরান হোসেন এক লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। বিয়ের কাবিনে পরীমণি সই করেন শামসুন্নাহার স্মৃতি নামে। ৬ নং ক্রমিকে জন্ম তারিখ ১৫/১২/১৯৯২ লেখা হয়। তবে ৪ নং ক্রমিকে তার স্থায়ী ঠিকানায় পিতা মৃত মনিরুল ইসলাম, মাতার নাম মৃত সালমা সুলতানা, গ্রাম বাকা, পোস্ট ও উপজেলা কালিয়া, জেলা নড়াইল উল্লেখ রয়েছে।

কেশবপুর পৌরসভার সাবেক নারী কাউন্সিলর শাহানা কবির ফতেমার ছোট ছেলে ফেরদৌস কবীর সৌরভ। তিনি জানান, ২০১২ সালে সৌরভ ছিলেন তুখোড় ফুটবল খেলোয়াড়। ওই বছর এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে ঢাকার একটি ক্লাবে ফুটবল খেলার ডাক পান সৌরভ। তখন স্ত্রী স্মৃতিকে নিয়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান।

ঢাকার বনশ্রীতে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রীকে মিরপুরের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করেন। সেখানে থাকার এক পর্যায়ে মিডিয়ায় জড়িত এক ব্যক্তির নজরে পড়েন স্মৃতি। তাদের মধ্যে পরিচয়ের এক পর্যায়ে তার বিভিন্ন স্টাইলের ছবি তুলে পত্রিকায় ছেপে তাকে মডেল ও নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখান ওই ব্যক্তি। এরপর শামসুন্নাহার স্মৃতি নাম পাল্টে পরীমণি করেন তিনি।পরীমণি বিয়ে

সৌরভ আরও জানান, পত্রিকায় ছবি ছাপার কিছুদিনের মধ্যে উশৃঙ্খল জীবন যাপন শুরু করেন পরীমণি। যে কারণে স্ত্রীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে সৌরভের। একদিন মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত সেই ব্যক্তিকে পরীমণি বিয়ে করেছেন বলে জানতে পারেন সৌরভ। এরপর ঢাকা ছেড়ে কেশবপুরে ফিরে আসেন তিনি। কেশবপুরে এসে ফুটবল ছেড়ে হাতে তুলে নেন গীটার। এক সময় তিনি পরিচিতি পান শিল্পী সৌরভ কবির হিসেবে। তার বন্ধুরা তাকে টেনে নেন আওয়ামী রাজনীতিতে। বর্তমান পৌরসভার ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার।

সৌরভ জানান, মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর পরীমণি সৌরভকে তাদের কেশবপুরের বহুতল বাড়িটি বিক্রি করে ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার জন্য উৎসাহিত করেন। ওই সময় সৌরভ ঢাকায় বিজিএমসি ফুটবল টিমের খেলোয়াড়। এক পর্যায়ে তারা কেশবপুরের বাড়িটি বিক্রি করে দেন। সে-সময় পরীমণির উশৃঙ্খল চলাফেরা শুরুর কারণে তারা ঢাকায় ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এটা নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।

এরই মধ্যে স্মৃতি তার নানীর নাম পরীবানুর ‘বানু’ কেটে ‘মণি’ যোগ করে পরীমণি হয়ে মিডিয়া জগতে পরিচিতি পেয়ে যান। ফলে ২০১৫ সালে সৌরভ কেশবপুরে ফিরে আসেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে পরীমনির সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে কথা হয়। তবে তারা কেউ কাউকে এখনও তালাক দেননি বলে সৌরভ জানান।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement