১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, বুধবার

মৌসুম এলেই পাটের দাম পান না কৃষকরা

Advertisement

ভরা মৌসুমে ফড়িয়া ও সিন্ডিকেটের কারনে সোনালী আঁশ পাটের দাম পড়তির দিকে। দেশের বিভিন্ন বাজারে কৃষকদের উৎপাদিত কাঁচা পাটের দাম কমেছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগেও যে পাট বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। সেই পাট এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। সিন্ডিকেটের ইশারাতেই ওঠানামা করছে বাজারদর। ফলন ভালো হলেও দামে মলিন কৃষকের মুখ। কারণ, বর্তমান দামে খরচ উঠবে না।

করেনাা মহামারি ও টানা বিধিনিষেধ-লকডাউনের কারনেই এমনিতেই ত্রাহি অবস্থা কৃষকদের। অনেক কৃষকের উৎপাদিত সবজি খেতে খামারে পঁচে যাচ্ছে। তার মধ্যে পাটের দামও ওঠানামা করতে থাকায় তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

এক সময় পাট ও পাটজাত দ্রব্যই ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস। স্বাধীনতার পর প্রথম বছর বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শতকরা ৮৪ ভাগেরও বেশি অর্জিত হয়েছিল পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। যে কারনে পাটকে সোনালি আঁশও বলা হয়ে থাকে।

সোনালি আঁশ খ্যাত বাংলাদেশের পাট বিশ্বসেরা। এ পাটের চাহিদা, গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। পাট উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায় যে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি (৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে দেশ। এর মধ্যে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলার এসেছে পাট ও পাট পণ্য থেকে।

বাংলাদেশে দেশি, তোষা ও মেসতা এই তিন জাতের পাটের চাষ হয়। দেশি পাটের আঁশ সাদা, তোষা পাটের আঁশ লালচে এবং মেসতা পাটের আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা হয়ে থাকে।

পাট চাষের জন্য উষ্ণ জলবায়ু ও প্রচুর বৃষ্টিপাত দরকার হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস পাট বোনার উপযুক্ত সময়। এসময় কৃষকেরা পাট চাষে ব্যস্ত হয়ে পরে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে পাট চাষিরা পাটগাছ কেটে ছোট ছোট করে আঁটি বাঁধে রাখে। আঁটিগুলো কিছুদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় যাকে পাট জাগ দেয়া বলে।

পাটের আঁশ পচে নরম হলে তা ছাড়ানো হয়। এরপর আঁশ ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। সেই আঁশকেই বলা হয় পাট। পাটের ভেতরের কাঠিকে পাটকাঠি বলা হয়।

পাট থেকে রশি, সুতা, বস্তা, কাপড়, কার্পেট ইত্যাদি তৈরি করা হয়। পাটকাঠি জ্বালানি হিসেবে এবং বেড়া ও কাগজ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। পাট দ্বারা কৃত্রিম রেয়ন তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালে পলিথিন ব্যাগ এর বিকল্পে পাট থেকে উৎপন্ন সোনালি ব্যাগ বা পাটের পলিথিন ব্যাগ বানানোর পরিকল্পনা নেন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি)। শিগগিরই এ ব্যাগ বাজারজাত করবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু এত কিছুর পরও অবহেলিত চাষীরা। মৌসুম এলেই পাটের বাজার সিন্ডিকেট, ফড়িয়া ও মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় মিইয়ে যায় তাদের হাসিমুখ। ফড়িয়া আর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা গেলে শৃঙ্খলা ফিরতে পারে পাটের বাজারে। ফিরতে পারে কৃষকের হাসিমুখ।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement