১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, মঙ্গলবার

পুঁই শাক চাষে অধিক লাভবান হবেন যেভাবে

Advertisement

আমাদের অনেকের প্রিয় একটি শাক হলেf পু্ইশাক। এটি এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। তবে পুঁই গাছের পাতা ও ডাঁটি শাক হিসেবে খাওয়া হয় বলে সচরাচর একে পুঁই শাক হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তবে চাষ পদ্ধতি সঠিক ভাবে হলে অধিক লাভবান হওয়া যায়।

আসুন আজ আমরা জেনে নিই কি পদ্ধিতিতে পুঁই শাক চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যাবে:

জলবায়ু ও মাটি নির্বাচন: পুঁইশাক ভালো জন্মে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে। আবার গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং রোদ পুঁইশাক গাছের পছন্দ। যদি তাপমাত্রা কম থাকে সেক্ষেত্রে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন কম হয়। তবে পুঁইশাক সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। পুঁইশাক বেলে-দোআঁশ থেকে এটেল-দোআঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল জন্মে। তবে যারা বাণিজ্যিকভাবে পুঁইশাক চাষ করতে চান সেক্ষেত্রে তাদের দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল মাটিযুক্ত জমি বেছে নিতে হবে।

জাত নির্বাচন: আমাদের দেশে দুই জাতের পুঁইশাক চাষ হয়ে থাকে। যথা

ক) সবুজ পুঁইশাক : পাতা ও কাণ্ড সবুজ।
খ) লাল পুঁইশাক : পাতা ও কাণ্ড লালচে।

তাছাড়াও বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ২টি জাতে আছে। যেমন বারি-১, বারি-২।

উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন: জমিতে জন্ম থাকা আগাছা পরিস্কারের পর ৫ থেকে ৬টি চাষ ও মই দিয়ে জমির মাটির উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। পুঁই শাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ৫০ সেন্টি মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।

সার প্রয়োগ: জমিতে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইউরিয়া ছাড়া সব সারই প্রয়োগ করতে হবে। যদি চারার বয়স ১০-১২ দিন হয় তাহলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গোবর ও টিএসপি দুই ভাগে দিতে হবে। যেমন অর্ধেক জমি তৈরীর সময় বাকি অর্ধেক চারা রোপণের সময় গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। পুঁইশাক চাষে শতক প্রতি সারের মাত্রা হল গোবর ৬০ কেজি, সরিষার খৈল ৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া ৮০০ গ্রাম টিএসপি ৪০০ গ্রাম এবং এমওপি ৪০০ গ্রাম।

সেচ ও পানি নিষ্কাশন: সাধারণত বর্ষায় সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সে সময় যদি মাটিতে রস না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। এমনকি প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে।

পুঁইশাক চাষে পরিচর্যা: জমিতে আগাছা জন্মেছে চোখে পড়লেই আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আশানুরুপ ফলন পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। কিন্তু পুঁইশাক গাছের গোড়ায় কখনই পানি জমতে দেয়া যাবে না। যদি পানি জমে থাকে তাহলে গাছের গোড়া পচে যেতে পারে। অনেক বৃষ্টিপাত হলে দেখা যায় যে গোড়ার মাটি ধুয়ে যায়। সে জন্য বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে চেপে দিতে হবে। চারা যদি ২৫-৩০ সেন্টিমিটার উঁচু হয় তাহলে চারার আগা কেটে দিতে হবে, যার কারণে গাছ ঝোপালো হয়।

পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন: পুঁইশাক ক্ষেত থেকে পোকামাকড় দমন করার জন্য নিয়মিত কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে। যাতে করে পোকামাকড় দমন করা যায়। তবে পাতার বিটল বা ফ্লি বিটল ছাড়া আর কোনো পোকা তেমন ক্ষতি করে না। এই পোকা পুঁইশাকের পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে ফেলে। সারকোস্পোরা পাতার দাগ পুঁইশাকের একটি মারাত্মক রোগ। এছাড়াও আরও কয়েকধরনের রোগ পুঁইশাক গাছে দেখা দিতে পারে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন: যদি চোখে পড়ে যে পুঁইশাকের ডগা লম্বা হতে শুরু করেছে তাহলে ডগা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। ডগা কেটে সংগ্রহ করার ফলে নতুন ডগা গজাবে। আবার দেখা যায় নতুন ডগা কয়েকবার কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায়। চাষ পদ্ধতি সঠিক ভাবে করলে প্রতি শতকে ১৩০-১৫০ কেজি পুঁইশাকের ফলন পাওয়া যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement