১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, বুধবার

প্রনোদনার ঋণ নিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

Advertisement

করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিতে পড়ায় সরকারের দেওয়া প্রণোদনা তহবিল থেকে অল্প সুদে ঋণ নেয় দেশের শীর্ষ একটি শিল্পগোষ্ঠী। ক্ষতি পোষাতে ঋণ নিলেও তারা রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য একটি ব্যাংকের বড় অঙ্কের ঋণ শোধ করে এ সময়ে।
পোশাক খাতের আরেকজন ব্যবসায়ীও ব্যবসার ক্ষতি পোষানোর কথা বলে প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু একই সময়ে নতুন কারখানাও কিনেছেন ওই ব্যবসায়ী। অন্য এক উদ্যোক্তা স্বল্প সুদের ঋণ প্রণোদনা নেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ শুরু করেছেন। এছাড়া করোনাকালে শেয়ারবাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগও করেছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসার ক্ষতি দেখিয়ে কম সুদের প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ নেওয়া গ্রাহকদের এমন ঘটনার নজির অনেক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারণা যে প্রণোদনার ঋণের বড় একটি অংশেরই অপব্যবহার হচ্ছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের সহায়তা করার লক্ষ্যে গত বছর মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ সুদে দেওয়া হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ। এসব ঋণের প্রকৃত সুদহার ছিল ৯ শতাংশ; বাকি সুদের টাকা জনগণের করের টাকায় ভর্তুকি দেয় সরকার।

অনেক ব্যবসায়ী কম সুদের এ ঋণ সুবিধা নিয়ে অন্য ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছেন। আবার কেউ কেউ ঋণের টাকা বেশি মুনাফা লাভের আশায় শেয়ারবাজারে খাটিয়েছেন। কেউ কেউ কিনেছেন জমি-ফ্ল্যাট; ক্ষতি পুষানোর নাম করে বিনিয়োগ করেছেন লাভজনক অন্য ব্যবসায়। অথচ এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল চলতি মূলধন হিসেবে। প্রণোদনার ঋণ বিতরণের শর্ততেই ছিল যে, এ দিয়ে অন্য ঋণ শোধ করা যাবে না; ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) কাছে পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে এসব প্রণোদনার ঋণ যথাযথ খাতে ব্যবহার না হয়ে অন্যান্য অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন এসে প্রণোদনার ঋণের টাকার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা খতিয়ে দেখেনি। যদিও এসব ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংকই দিয়েছিল। এর উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন যে, প্রণোদনার ঋণ কোথায় গেল- তা করোনার কারণে খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। এখন দ্বিতীয় দফায় ঋণ বিতরণ শুরু হবে এবং এ জন্য ব্যাংকগুলোকে পুনরায় সতর্ক করা হয়েছে। ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নজর রাখতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, এসব ব্যাংকগুলোর এমডিদের কাছে পাঠানো চিঠিতে প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নে ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিয়মিত তদারক করার নির্দেশ প্রদান করেছে। ঋণের টাকা অনুৎপাদনশীল খাতে যেন ব্যবহার না হয়- সে জন্য তা অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে যাচাই করতে বলা হয়েছে।

এদিকে দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা ঋণের জন্য বরাদ্দকৃত ৫৩ হাজার কোটি টাকা বিতরণের কথা জানিয়ে অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোন ব্যাংক কত টাকা ঋণ দিবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের উদ্দেশে গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে কম সুদে প্রণোদনা ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দফার ঋণ বিতরণ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এর আওতায় ব্যাংকগুলো ছোট ও বড় উদ্যোক্তাদের চলতি মূলধন হিসেবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ সুযোগটির গ্রহণ করার জন্য প্রভাবশালী ও বড় ব্যবসায়ীরাও ঋণ নিতে শুরু করে। যেমন আবুল খায়ের, এস আলম, বিএসআরএম, বসুন্ধরা, প্রাণ, সিটি, কেএসআরএম, এসিআই, জিপিএইচ, নাভানা, বেক্সিমকো, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের, স্কয়ার ও থারমেক্স-এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠানই মোট ঋণ নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

প্রণোদনার ঋণ সবচেয়ে বেশি বিতরণ হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওল বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক সরাসরি কাউকে টাকা দেয় না। ফলে ঋণের অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement