৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, মঙ্গলবার

বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনি এখনো অধরা

Advertisement

বাঙালি জাতির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত পলাতক পাঁচ খুনির মধ্যে এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ও নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন। বাকি তিনজন- শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন খান ও খন্দকার আব্দুর রশিদ কোথায় আছেন, সে বিষয়ে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেম উদ্দিন খান ইউরোপের কোনো দেশে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরেক খুনি শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান, লিবিয়া অথবা স্পেনে এবং খন্দকার আব্দুর রশিদ পাকিস্তান অথবা আফ্রিকার কোনো একটি দেশে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী ব্রাজিল থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ২০০৪ সালে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

রাশেদকে ফেরত দেওয়ার জন্য ২০১৮ সালে দু’বার এবং ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর দাবি তোলেন।

২০১৯ সালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলসের সঙ্গে এক বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে রাশেদ চৌধুরীর বিচারের নথিপত্র চেয়েছে ওয়াশিংটন।

২০২০ সালের এপ্রিলে ঢাকায় আমেরিকান রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের। এছাড়া দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনায় প্রায় নিয়মিত ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় রাশেদ চৌধুরী।

ঢাকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের বিষয়টি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয় দেশটির বিচার বিভাগ। এর মধ্যে দেশটির ক্ষমতার পালাবদল হয়ে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। দেশে ফিরে মোমেন জানান, সফরে রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি।

খুনি নূর চৌধুরী বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নূরকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে একবার এবং ২০০৭ সালে একবার নূরকে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় কানাডা। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার বিষয়টি নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নূরকে ফের ফেরত চায়।

এরই মধ্যে কানাডা থেকে বহিষ্কার এড়াতে নূর চৌধুরী সে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরে প্রি-রিমুভ্যাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট (প্রাক-অপসারণ ঝুঁকি মূল্যায়ন) আবেদন করেন। সেখানে নূর উল্লেখ করেন, ‘কানাডা থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হলে তাকে ফাঁসি দেওয়া হবে।’ এ ধরনের আবেদন সাধারণত এক বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু নূর চৌধুরীর ক্ষেত্রে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেল ১০ বছরেও সেটি নিষ্পত্তি করেনি।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কানাডার ফেডারেল কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় নূর চৌধুরীর অবস্থানসংক্রান্ত তথ্যের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আবেদন করা হয়। পরের বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কোর্ট বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। অর্থাৎ নূর চৌধুরীর অবস্থানসংক্রান্ত তথ্য জানানোর জন্য কানাডা সরকারকে নির্দেশ দেয়। তবে এ বিষয়ে কানাডার সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে মোসলেম উদ্দিন খান ইউরোপের কোনো একটি দেশে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে করোনা মহামারির মধ্যে গত বছরের জুন মাসে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বঙ্গবন্ধুর এ খুনি ভারতে আটক হওয়ার খবর ছাপে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান, লিবিয়া বা স্পেনে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সরকারের কাছে তার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।

খন্দকার আব্দুর রশিদ পাকিস্তান বা আফ্রিকার কোনো একটি দেশে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারের কাছে তার বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।

বঙ্গবন্ধুর বাকি ছয় খুনির মধ্যে পলাতক আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল। জানা যায়, গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ বছর ভারতের কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসলে প্রথমবারের মতো ওই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৯৮ সালে হত্যার দায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০০০ সালে হাইকোর্টে ১২ জনের মৃত্যদণ্ড বহাল রাখেন।

২০০৯ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলে আসামিরা রিভিউ আপিল করেন। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রিভিউ আপিল খারিজ করা হয় এবং পরদিন ২৮ জানুয়ারি পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement