২৭ মার্চ, ২০২৫, বৃহস্পতিবার

বরগুনায় ১১৩ টাকা খরচে পুলিশের চাকরি পেলেন ১৯ জন

Advertisement

ঘুষ-তদবির ছাড়া মাত্র ১১৩ টাকা খরচ করে পুলিশের চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে স্বপ্নপূরণ হলো বরগুনার ১৯ তরুণ তরুণীর। মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেকে। পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র বাবা-মায়ের স্বপ্ন। 

বরগুনা জেলা পুলিশ লাইনস্ মাঠে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ কার্যক্রমের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে বুধবার (২৪ নভেম্বর ২১) রাতে ওই ১৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ এবং নারী ছিল ৩ জন। 

বরগুনায় ২০২১ সালের পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি প্রাপ্তদের বেশিরভাগই ছিল  দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের কেউ দিনমজুরের সন্তান, কেউ ভ্যান চালকের আবার কেউবা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির।  জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোন মতে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে চূড়ান্ত চাকুরী নামক সোনার হরিণটি পাওয়ায় অনেকের চোখেই ছিল আনন্দ অশ্রু। 

বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক এর শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার কারণেই শারীরিক যোগ্যতায় উত্তীর্ণদের এবং মেধার ভিত্তিতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ প্রদাণ করেছেন। 

বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হতদরিদ্র আংনামং এর মেয়ে লাচানচো। তার স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। একটি সূত্র থেকে জানতে পেরে পুলিশে চাকরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না এই মনোবল নিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। সকল রকমের বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হয়ে কোনো টাকা ছাড়াই পুলিশে নিয়োগ পেলেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির রাখাইন সম্প্রদায়ের মেয়ে লাচানচো। 

বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. আলী হোসাইনের মেয়ে নুসরাত জাহান মিরু। ছোট বেলা থেকে দারিদ্রতার মাঝে তার বেড়ে ওঠা। তিনি ভেবেছিলেন কোনদিন মনে হয় সরকারি চাকরি কপালে জুটবে না। কিন্তু পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে তার সেই ভাবনার অবসান ঘটলো। মাত্র ১১৩ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে নুসরাত জাহান মিরুর।  

মাত্র তিন টাকার আবেদন ফরম, ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট ও চালান ১০ টাকাসহ মোট ১১৩ টাকা খরচ করে মেধা ও যোগ্যতায় পুলিশে চাকরি পেয়ে নিজের অনুভূতি  প্রকাশ করে মো. টিপু নামে এক তরুণ বলেন, আমার বাবা একজন ভ্যান চালক। অনেক কষ্ট করে দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি। আমার নিজের যোগ্যতায় নিয়োগ কার্যক্রমের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে আমি চূড়ান্ত হয়েছি। একেবারেই ঘুষ বা টাকা ছাড়া চাকুরী পেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য হতে পেরে নিজেকে আজ গর্বিত মনে করছি।  

দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই কাজ করতে চাই জানিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী গ্রামের মোস্তফা কামালের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার শামু বলেন, ছোট বেলা থেকে শুনতাম টাকা ছাড়া পুলিশে চাকুরী হয় না। কিন্তু এবার আমর এই চাকুরী পেতে কোন রকমের অর্থ দিতে হয় নাই।   

বরগুনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলায় পুলিশের ১৯ জন কনস্টেবল নিয়োগে সরকার কর্তৃক বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি (সাধারণ, মুক্তিযোদ্ধা, আনসার ও ভিডিপি, এতিম, পোষ্য এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা) অনুসরণ করে গত ১৪ ও ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৭৬০ জন চাকরি প্রার্থী প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। শারীরিক যাচাই-বাছাইয়ের পর ৩ দিনব্যাপী শারীরিক সক্ষমতা অর্জন, লিখিত এবং মনস্তাত্তিক ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় কোন তদবীর-সুপারিশ ব্যতিত ১৯ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক। 

বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক এ ব‍্যাপারে কেটিভি প্রতিদিন কে বলেন, বরগুনা জেলায় এবার ১৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারীকে সহ মোট ১৯ জনকে কনস্টবল পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। শাররীর যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ বাস্তবায়িত করা হয়েছে। 

মাহমুদ হাসান তাপস/বরগুনা/সারাবাংলা ডেস্ক

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement