চার মাস আগে এলপিজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিইআরসি। কিন্তু বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি এক সিলিন্ডার (১২ কেজি) গ্যাস। রান্নার কাজে ব্যাপকভাবে এলপিজি ব্যবহার করেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি যানবাহনের জ্বালানি হিসেবেও এখন এলপিজির ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা- ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন’ (বিইআরসি) চার মাস আগে এলপিজি গ্যাসের দাম বেঁধে দিয়েছিল। তারপর থেকে বিশ্ববাজারের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়মিতভাবে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। কিন্তু তা কার্যকর করছেন না দেশের অধিকাংশ বিক্রেতা।
বিইআরসির ঘোষিত দাম নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে এ খাতের কোম্পানিগুলোর সংগঠন-‘এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (লোয়াব)। তারা নতুন করে দাম নির্ধারণের আবেদন করেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ ও ৮ জুলাই শুনানির জন্য বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছিল বিইআরসি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এই শুনানি স্থগিত করা হয়। এদিকে গণশুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোনো অভিযান না চালানোর অনুরোধ করে ১২ জুলাই বিইআরসিকে চিঠি দিয়েছিল লোয়াব। পাল্টা চিঠি দিয়ে (১৫ জুলাই) বিইআরসি লোয়াবকে বলেছে যে, ঘোষিত মূল্যহার বাস্তবায়ন না করলে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। লোয়াবের সভাপতি আজম জে চৌধুরী জানান যে, বিইআরসি আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেও তাঁদের পক্ষে নির্ধারিত দাম মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এতে প্রতি সিলিন্ডারে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১৫০ টাকা লোকসান গুনতে হবে। দাম যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করা না হলে সবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
আদালতের নির্দেশে গণশুনানি করে গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে সংস্থাটি। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও এর প্রেক্ষিতে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। ১২ জুলাই কক্সবাজারের একটি এলপিজি অটো গ্যাস ফিলিং স্টেশনকে বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করার কারণে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
অন্যদিকে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি অটো গ্যাসের লিটার-প্রতি বর্তমান নির্ধারিত দাম ৪৪ টাকা। আগের মাসে তা ছিল ৪১ টাকা ৭৪ পয়সা। অথচ প্রায় দুই মাস ধরেই ফিলিং স্টেশনগুলোতে অটো গ্যাসের দাম রাখা হচ্ছে ৪৫ টাকা করে। ঢাকার একাধিক ফিলিং স্টেশন ঘুরে বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে।
দেশে সবচেয়ে বেশি এলপিজি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে। বেসরকারি খাতে এক সিলিন্ডার (১২ কেজি) গ্যাসের দাম জুলাই মাসের জন্য ৮৯১ টাকা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। তবে তা অমান্য করে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদেক খান সড়কের এক বাসিন্দা জানিয়েছে যে, তিনি এক সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ১০০ টাকায়। আবার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তার অতিরিক্ত খরচ হয়েছে ৫০ টাকা।
এদিকে খুচরা বিক্রেতাদের দাবি করেন যে, বেশি দামে কিনতে হয় বলেই তারা সঠিক দামের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মোহাম্মদপুর এলাকার এক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত চার মাসে একবারও বিইআরসি ঘোষিত দামের সাথে ওই কোম্পানির মূল্যের সমন্বয় ছিল না।
বিইআরসি বলছে যে তারা সব পক্ষকে নিয়েই গণশুনানির মাধ্যমে এপ্রিল মাসে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। এবং তারপর থেকে প্রতি মাসেই নিয়মিত দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এর জন্য বিইআরসি একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। কিন্তু ওই কমিটির কোনো বৈঠকে অংশ নেননি লোয়াবের প্রতিনিধি। বিইআরসির সদস্য (জ্বালানি) মকবুল-ই-ইলাহি চৌধুরীর বলেন যে, গণশুনানি ছাড়া লোয়াবের দাম বাড়ানোর আবেদন বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং সবাইকে আইন মেনেই ব্যবসা করতে হবে। ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট না হলে আদালতে যেতে পারেন।