১০ অক্টোবর, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

ব্রিটেনে মামলায় জিতল ব্র্যাক সাজন ও দুই বাংলাদেশি প্রবাসী

Advertisement

ব্রিটেনে রেজিস্ট্রেশন বাতিল করায় সরকারের রেগুলেটরি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলায় জয়লাভ করেছে ব্র্যাক-সাজন এক্সচেঞ্জ লিমিটেড। ফলে ব্রিটেনে আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করছে ব্র্যাক-সাজন এক্সচেঞ্জ।

এদিকে দেশটির বিরোধী লেবার পার্টির এমপি আপসানা বেগমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে করা সংবাদে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (বিবিসি) ব্যবহার করে ব্রিটিশ বাংলাদেশি কাউন্সিলর লিজা বেগমের ছবি। পরে লিজা বেগম বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত ৩০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করে।

অন্যদিকে ব্রিটেনের একটি সুপারস্টোরের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুতির অভিযোগে করা মামলায় জিতেছেন এক বাংলাদেশি।

ট্যাক্স ট্রাইব্যুনাল কোর্টের মামলায় এইচএমআরসির বিরুদ্ধে জয় লাভের পর আবার নিজেদের কার্যক্রম শুরু করতে পারছে ব্র্যাক-সাজন এক্সচেঞ্জ। এমএলআর আইন লঙ্ঘন, তাদের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ নিরাপদ নয় এবং তাদের ওপর ভরসা করা যাবে না- এমন অভিযোগে গত বছরের ২৬ মে ব্র্যাক-সাজন মানি-ট্রান্সফার সংস্থার রেজিস্ট্রশন বাতিল করে দেয় এইচএমআরসি। এরপর থেকে সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ব্র্যাক-সাজনের। এরপর বন্ধ থাকে প্রায় এক বছর এবং সে সময় মামলা চলে। যুক্তরাজ্য জুড়ে ব্র্যাক-সাজনের প্রায় ৩শ এজেন্সি রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মামলা চললেও ব্র্যাক-সাজনের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণকারী কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কিংবা কারো অর্থ আটকা পড়েছে বলে শোনা যায়নি।

সরকারের রেগুলেটরি সংস্থার বিরুদ্ধে কোনো বাংলাদেশি সংস্থার ব্যয়বহুল আইনি লড়াইয়ে বিশাল এই জয়লাভের পর কমিউনিটিকে বিষয়টি জানানোর তাগিদ থেকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। গত ১৩ জুন পূর্বলন্ডনের হোয়াইটচ্যাপলের একটি রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ব্র্যাক-সাজনের সিইও আব্দুস সালাম মামলার বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় ব্রাক-সাজনের কয়েকজন শেয়ার হোল্ডার ও কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অন্যতম শেয়ার হোল্ডার ও কুশিয়ারার ট্রাভেল অ্যান্ড মানি-ট্রান্সফারের কর্ণধার হারুন মিয়া, দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ার মিসবাউর রহমান, শেয়ার হোল্ডার সুমন আহমদ, সংস্থাটির ম্যানেজার সিপ্রিয়ান গোমেজ ও কমিউনিকেশন ম্যানেজার শোয়েব চৌধুরী।

ব্র্যাক-সাজনের সিইও আব্দুল সালাম জানান, কিছু অভিযোগ এনে গত বছরের ২১ মে এইচএমআরসি ব্রাক-সাজন এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়। বাতিল করার কারণ হিসেবে অর্থ পাচার, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের ঝুঁকিগুলো সঠিকভাবে সনাক্ত ও তা মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

এইচএমআরসির পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে, ব্র্যাক সাজানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই আইন লঙ্ঘন ও ব্যর্থতার ব্যাপারে অবগত ছিলেন এবং কোনো সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এইচএমআরসির এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্র্যাক-সাজনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত বছরের ২১ জুলাই ফার্স্ট টিয়ার ট্যাক্স-ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন তারা। গত ১ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করার পর ৯ জুন দীর্ঘ ১৭৮ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন যে, এইচএমআরসি ব্র্যাক-সাজন এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করেছিল তারা সেসবের কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। এই মর্মে বিচারক এইচএমআরসির সিদ্ধান্ত বাতিল করে ব্র্যাক-সাজন এক্সচেঞ্জের এমএলআর রেজিস্ট্রেশন বহাল রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সালাম জানান, দীর্ঘ একবছর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের প্রায় ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতি হয়েছে। তারা মামলার যাবতীয় খরচ পাবেন। আগামী ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে ব্র্যাক-সাজন আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে আপসানা বেগমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে করা সংবাদে বাংলাদেশি কাউন্সিলর লিজা বেগমের ছবি ব্যবহার করায়, বিবিসিকে ৩০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে।

মেট্রো নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর বিবিসি লন্ডন লেবার পার্টির ইলেকশন ইভেন্ট এবং ইলেকশনের ইশতেহার চালুর অনুষ্ঠানে আপসানা বেগমের জায়গায় লেবার কাউন্সিল লিজা বেগমের ছবি সম্প্রচার করা হয়েছিল। সেই লাইভ নিউজে লিজা বেগমকে দেখিয়ে বিবিসি লন্ডনের রাজনৈতিক সংবাদদাতা বলেছিলেন, ইনি আপসানা বেগম, ইনিই অসততার তিনটি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। এদিকে ব্রিটিশ বাংলাদেশী আপসানা বেগমের নামে হাউসিং ইস্যুর জন্য তিনটি অভিযোগ আনা হলেও পরবর্তীতে আদালতের রায়ে তিনি নিরাপরাধ প্রমাণিত হয়েছেন।

আপসানা বেগমের জায়গায় লিজা বেগমকে দেখানোর অভিযোগ আনার পর বিবিসি তাদের এক বিবৃতিতে জানায়, বিবিসি ওয়ান সম্প্রচারের লিজা বেগমকে দেখানোর যৌক্তিক কারণ রয়েছে, সন্দেহ করা হচ্ছে যে লিজা বেগমও আবাসন জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিলেন।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার আদালতে পড়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিবিসির এই ভুলের কারণে লিজা বেগমকে বিশেষ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আর বিবিসি ও অন্যান্য মিডিয়া সাধারণত বিএএমই (কালো, এশিয়ান, মাইনোরিটি, এথনিসিটি) লোকদের তাদের গায়ের রঙ অনুযায়ী বিবেচনা করে এবং সে অনুযায়ী তাদের চিহ্নিত করে উপস্থাপন করে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যা একটি বর্ণবাদী আচরণ। দুই নারী একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও বিবিসিতে কেউ তার ছবি সম্প্রচারের আগে একবার সংশোধনও করেনি। আপত্তিকর এই সম্প্রচারের রাতে লিজা বেগম প্রথমে বিবিসিতে যোগাযোগ করেন এবং পরের দিনের বিবিসি তাদের বুলেটিনে ক্ষমা চায়। পরে তিনি মানহানি মামলার জন্য পদক্ষেপ নেন।

পরে বিবিসি জানায়, একই অনুষ্ঠানে আপসানা বেগম ও লিজা বেগম উপস্থিত থাকায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপসানা বেগমের জায়গায় লিজা বেগমকে দেখানো হয়েছে। এটা বর্ণবাদী কোনো আচরণ নয়। আমাদের মিসইনফরমেশনের কারণে এটা ঘটেছে। এজন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।

আদালত বিবিসিকে সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তির ছবি বা ভিডিও প্রকাশের আগে বিবিসিকে অবশ্যই ভালোভাবে নিরীক্ষণ করে প্রচার করতে হবে।

অন্যদিকে মজা করে ম্যানেজারকে টেক্সট দেওয়ার কারণে চাকরি হারানো এক ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্রায় ৫০ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির নামের ওই বাংলাদেশি সম্পর্কে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে বলা হয়েছে তিনি ২০০২ সালে ব্রিটেনে আসেন। তারপর গত ১৭ বছর ধরে সাউথ উডফোর্ড ওয়েইটরোজে কাজ করতেন।

এই দীর্ঘ কর্মজীবনে তার টিম ম্যানেজার ম্যাথু ফোর্ডের সাথে সম্পর্ক ছিলো অনেক আনন্দময়। কিন্তু সেই আনন্দময় সম্পর্কে ছেদ পড়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসে যখন জাহাঙ্গীর মজা করে তার ম্যানেজারকে মোবাইলে মেসেজ দেন, একটি ছুরি পেয়েছেন তিনি। এই মেসেজ পেয়ে ম্যানেজার উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করেন, এই মেসেজের মানে কি?
তখন জাহাঙ্গীর আবারো মজা করে লিখেন, তুমি কি ভয় পেয়েছো? সেই সাথে ৪টি হাসির ইমোজি বা সংকেত পাঠান। এই সাধারণ কথাবার্তাকে তার টিম ম্যানেজার খুব সিরিয়াসভাবে নেন। পরের দিন টিম ম্যানেজার ম্যাথু তার সিনিয়র কর্মকর্তাকে বলেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন এবং ধারণা করছেন জাহাঙ্গীর কবির কাজে আসার সময় ছুরি নিয়ে আসতে পারে। সেদিন সন্ধ্যা ৭টায় জাহাঙ্গীর কবির স্টোরে ঢুকেই দেখেন পুলিশ তার জন্য অপেক্ষা করছে। পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে কোনো ছুরি পায়নি। জাহাঙ্গীর কবির মারাত্মক ভয় পেয়ে যান, তিনি পুলিশকে বুঝাতে সক্ষম হন যে এটা নিছক মজা ছিল, তিনি কোনোভাবেই তার সহকর্মীকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এটা করেননি।

পুলিশ তখন জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই চলে যায়। এরপর জাহাঙ্গীর কবির একটি মেসেজ পাঠিয়ে ম্যাথুর কাছে ক্ষমা চান। ম্যাথু তখন আশ্বস্ত করে পাল্টা উত্তরে লিখেন, তিনি সামান্য চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন এ ধরনের অস্বাভাবিক টেক্সট ম্যাসেজ দেখে। এ ধরনের বিপজ্জনক কথাবার্তা বলার সময় আরও বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ম্যাথু ।

কিন্তু কোন ধরনের অভিযোগ দায়ের না করেই, হঠাৎ করেই সম্ভাব্য অসদাচরণের একটি অভিযোগ তুলে কবিরকে একটি মিটিংয়ে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেয়া হয়। কবির আবারও ব্যাখ্যা দিয়ে বলে সে তার দুই শিশু সন্তানের জন্য রান্না করতে গিয়ে ছুরি পায় কিচেনে, এই কথাটাই সে মজার ছলে তাকে লিখেছিল। কিন্তু ওয়েইটরোজ কর্তৃপক্ষ তাকে অভিযুক্ত করে এবং তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এই ঘটনায় কবির যান এমপ্লয়মেন্ট কোর্টে। যেখানে দীর্ঘ শুনানি শেষে কোর্টের বিচারক জুলিয়া জোনস বলেন, কবিরের মেসেজে কোনো ধরনের হুমকি ছিল না। বরং ওয়েটরোজ এই ঘটনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে শুধুমাত্র ম্যাথুর প্রতিক্রিয়ার জন্য।

এই ঘটনায় সঠিকভাবে কবিরকে চাকুরিচ্যুত করা হয়নি তাই ক্ষতিপূরণ হিসাবে কোর্ট ওয়েটরোজকে ৪৭ হাজার ১৯২ পাউন্ড দিতে আদেশ দিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement