মহামারি করোনাভাইরাসে লোকসানে ধুঁকছে ভারতের বেসরকারি চিকিৎসা খাত। এর একমাত্র কারন বিদেশিদের চিকিৎসা নিতে দেশটিতে না যাওয়া। আর ভারতে প্রতি বছর চিকিৎসা পর্যটন খাতে যত বিদেশি গিয়ে টাকা খরচ করেন, তার সিংহভাগই বাংলাদেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ভারতে যত বিদেশি চিকিৎসা নিতে গেছেন তার শতকরা ৫৪ ভাগই বাংলাদেশি। তবে করোনা জটিলতায় বাংলাদেশিরা দেশটিতে যাওয়া কমিয়ে দেয়ায় ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্যখাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের অতি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি, সেবা না পাওয়া এবং কোন কোন ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীদের পর্যাপ্ত সময় ও মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসা না দেয়ায় ভারতমূখী হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে চিকিৎসার আকাশ সমান ব্যয়, কমিশন ভিত্তিক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা চাপানোসহ দালাল চক্রের উৎপাত এবং রোগীদের জিম্মি করার মতো অভিযোগের কারনে দেশী রোগীরা স্থানীয় চিকিৎসায় দিনদিন আস্থা হারাচ্ছেন।
ভারতীয় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার ছিল শতকরা ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তখন ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ মেডিকেল ট্যুরিস্ট নিয়ে এ তালিকার শীর্ষে ছিল মালদ্বীপ। এরপর দিনে দিনে বাংলাদেশিদের হার বেড়েছে আর কমেছে মালদ্বীপের। কারন মালদ্বীপ ভারতের ওপর চিকিৎসা নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছে।
করোনার ধাক্কা সামলে ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম আগের অবস্থায় ফিরতে তিন থেকে ছয় মাস লাগতে পারে। ফ্লাইট চালু হওয়া, দূতাবাসগুলোতে মেডিকেল ভিসা ইস্যু হওয়া, এসবে সময় লাগবে। বর্তমানে শুধু জরুরি ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। মেডিকেল ট্যুরিজম ফের শুরু হতে ওইসব দেশের পাশাপাশি ভারতের মহামারি পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৯ সালে ভারতে মেডিকেল ট্যুরিস্টদের মধ্যে বাংলাদেশিদের হার দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ, বিপরীতে মালদ্বীপের হার নেমে আসে মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশে। ওই বছর আফগান মেডিকেল ট্যুরিস্টদের হার ছিল ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশে। ২০১৯ সালে তা কমে ৪ দশমিক ৭ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর ২০২০ সালে আফগান মেডিকেল ট্যুরিস্টদের সংখ্যা আবারও বেড়েছে।
ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ফোরটিস হেলথকেয়ারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডা. মনীষ মাত্তো গণমাধ্যমকে বলেন, দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের বেশিরভাগ মেডিকেল ট্যুরিস্ট আসেন বাংলাদেশ এবং পশ্চিম এশিয়া থেকে। চেন্নাই পায় মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং মরিশাস থেকে। ব্যাঙ্গালুরুর অধিকাংশ মেডিকেল ট্যুরিস্ট বাংলাদেশ, পশ্চিম এশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলো থেকে আসে।
ডা. দেবী শেঠির মতে, করোনার ধাক্কা সামলে ভারতের মেডিকেল ট্যুরিজম আগের অবস্থায় ফিরতে তিন থেকে ছয় মাস লাগতে পারে। তিনি বলেন, ফ্লাইট চালু হওয়া, দূতাবাসগুলোতে মেডিকেল ভিসা ইস্যু হওয়া- এসবে সময় লাগবে। বর্তমানে শুধু জরুরি ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে। মেডিকেল ট্যুরিজম ফের শুরু হতে ওইসব দেশের পাশাপাশি ভারতের মহামারি পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।