প্রখর রোদ। তপ্ত দুপুরে পথে ঘাটে লোকজনের আনাগোনা কিছুটা কম। রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টর। করোনার বিধিনিষেধে বন্ধ স্থানীয় সানবিম স্কুল। আশপাশের কিছু ছোট খাটো দোকান খোলা। কেউ ঝিমুচ্ছেন। কেউ বা খোশ গল্পে মত্ত। নীরবতা ভেঙে ফেলছে রিকশার বেল বা অটো রিকশার বিকট হর্ন।
গাছের ছায়ায় দু চারজন মানুষের মুখ। সবজিওয়ালার ভ্যান। সব কিছু ছাপিয়ে ঝকমকে রোদে রঙিন বেলুনের ঝাঁক কাঁধে নিয়ে নীরবে হেঁটে যাচ্ছিলেন একজন। মলিন মুখ। বিষন্নতার ছোঁয়া চোখে মুখে।
হাসিমুখে ডাকতেই সামনে এলেন। পুরো নাম হারুনুর রশিদ। ডাক নাম হারুন। বাড়ি রংপুরে। কথা হলো কেটিভি প্রতিদিনের হয়ে। বাতাসে মিইয়ে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে ভেসে এল তার জীবনের সংক্ষিপ্ত কথকথা।
- নাম কি আপনার?
- জ্বি, হারুনুর রশিদ। হারুন।
- কোথায় থাকেন?
- দিয়াবাড়ি।
- একা, না পরিবার সহ?
- একা। একাই তো চলতে পারি না।
- পরিবার কোথায়?
- স্যার আমার দুই ছেলে আর ওয়াইফ। হ্যারা রংপুর থাকে।
- কতদিন বেলুন বেচেন?
- এই সপ্তাহখানেক।
- আগে কি করতেন?
- খেলনার দোকান আছিল, ছাতাও বেচতাম।
- সেটা কি হলো?
- করোনায় বেচাবিক্রি নাই। পুঁজি শেষ।
- বেলুন বিক্রি ধরলেন কেন?
- পুঁজি কম লাগে। গতকাল ৩শ টাকার বেলুন আনছিলাম। ৪শ বেচছি। একশ টাকা লাভ।
- একশ টাকায় দিন চলে?
- কি করব? চলতে হয়। ঘর ভাড়া দিতে পারিনা। পরিবার বাড়ি পাঠায় দিছি।
- আগে কেমন আয় করতেন?
- চইলা যাইতো দিন স্যার।
- বেলুনের বেচাবিক্রি কেমন?
- নাই। পোলাপানের স্কুল বন্ধ। সারাদিন বাসাবাড়ির সামনে দিয়া হাঁটি। যদি কোন পোলাপানের নজরে পড়ে, এক দুইটা কেনে।
- এভাবে দিন চলবে?
- কি করব স্যার। মইরা যাওন ছাড়া গতি নাই। গরীবের সব শেষ।
- দেশের (রাষ্ট্রের) কাছে কি চান?
- কিছু চাই না। বাঁইচা থাকতে চাই।
কথা বলতে বলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন হারুন। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে বিদায় নিলেন। দুরে মিলিয়ে গেলেন অলি-গলি পেরিয়ে। যদি কেউ কেনে এক দুটো বেলুন।