পাট চাষে খরচ কম এবং দাম ভালো তাই দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে তুলনামুলক হারে রাজশাহীতে বৃদ্ধি পেয়েছে চাষ। রাজশাহীতে কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর পাট চাষ বেড়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে এ বছর সব মিলিয়ে রাজশাহীতে ১৮ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
আবার রাজশাহীর কয়েকটি জায়গায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুর, ডোবা, খাল-বিল সহ আরও অনেক জলাশয় স্থানে পাট কেটে জাগ দেয়ার জন্য ডুবিয়ে রাখা হয়েছে। গ্রামের রাস্তার পাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে সারি সারি করে পাট শুকাতে দেয়া হয়েছে। আবার গুচ্ছ করে বোঝা বেঁধে রাখা হয়েছে পাটের শোলা।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানিয়েছে, পাট চাষ শুরু হয় মূলত রবি মৌসুমের শুরুতেই। পাট চাষের ক্ষেত্রে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। তবে পাট চাষে আগাছামুক্ত রাখতে হয়, এজন্য নিড়ানির প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়াও পাটের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি। তবে এবার আষাঢ়ের শুরু থেকেই তা পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল। এজন্য পাট চাষে প্রয়োজনীয় পানির জোগান মিলেছে প্রকৃতি থেকেই।
পাট চাষীদের অতিরিক্ত খরচ গুনতে হয়নি পানি সেচের জন্য। এমনকি খালে বিলে পর্যাপ্ত পানির প্রাপ্যতা মেলায় তা পরবর্তীতে ‘পাট জাগ’ দেয়ায় সুবিধে হয়েছে। তাছাড়াও পাটের বাজার দাম ভালো পাওয়ায় গত পাঁচ বছরে ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে পাট চাষ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২১-২২ মৌসুমে বিভিন্ন ফসল আবাদের অগ্রগতির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ বছর রাজশাহীতে মোট ১৮ হাজার ৩৯ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। তারমধ্যে ১৫ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমির পাট কাটা হয়েছে যা শতকরা হিসেবে ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। তাতে মোট উৎপাদন হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন। চলতি বছর হেক্টর প্রতি ফলন বেশি হয়েছে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়েছে।
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামের পাট চাষী মোঃ ইমরান আলী জানান, ৭ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলাম গত বছর। কিন্তু এ বছর তা ১০ বিঘাতে নিয়ে গেছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যয়ও কম হয়েছে আবার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। তবে এখনও পাট কাটা শুরু করিনি।
অন্যদিকে রাজশাহী রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহকারী পরিচালক কাজী সাইদুর রহমান বলছেন, বাংলাদেশকে এক সময় বলা হতো সোনালি আঁশের দেশ। এখন যদিও সেই ধারাবাহিকতা থেকে কিছু বিচ্যুতি ঘটেছে। কিন্তু প্রায় ৫ বছর যাবৎ প্রায় প্রতিবছরই পাট রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে পাটের দামও বেড়েছে। রাজশাহী থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৮ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৫.৭৪ ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৯. ৫৫ ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৫২৮.১৫ ডলারের পাট রপ্তানি করা হয়েছে। তবে বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা থাকায় এবারও পাট রপ্তানি ভালো হবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক তৌফিকুর রহমান বলেন, রাজশাহীতে ‘২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে ১৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। তখন পাটের চাষও বেশি হয়, ফলন ও দাম দুটোই বেশি পেয়েছিল পাট চাষীরা। এ বছরে পাটের আবাদ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৯ হেক্টর।’
জমির মালিক বা চাষিকে জমিতে ‘একসময় পাটের জমিতে আগাছা নিধনের জন্য অতিরিক্ত শ্রমিক লাগিয়ে খরচ করতে হতো। তবে এখন আর তা করতে হয় না। আগাছা নিধনে এখন কিটনাশক বের হয়েছে। উন্নত চাষাবাদ ও কিটনাশক প্রয়োগে কমেছে ব্যয়। তাছাড়াও পাটের বিক্রয়মূল্য ভালো পাওয়ায় রাজশাহীতে প্রতি বছরই পাট চাষ বাড়ছে বলে জানান উপ-পরিচালক তৌফিকুর রহমান।’