পাবনার সুজানগর উপজেলায় পদ্মার নদীর তীরে একটি ভয়ঙ্কর ‘রাসেল ভাইপার ‘ সাপ দেখা গেছে। এ সময় ওই সাপটির ছোবলে স্বপ্না খাতুন (৪০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের গুপিনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত স্বপ্না ওই গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের মেয়ে এবং উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের সৈয়দপুর (ভাদুরভাগ) গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, গত দেড় মাস আগে স্বপ্না খাতুনের স্বামী মারা যাওয়ায় তিনি বাবার বাড়ি সাতবাড়িয়ার গুপিনপুরে অবস্থান করছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে স্বপ্না খাতুন বাড়ির নিকটে পদ্মা নদীর ধারে হাঁটাহাঁটি করতে গেলে একটি বিষধর সাপ তার পায়ে কামড় দেয়। এ সময় স্থানীয়রা সাপটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং স্বপ্না খাতুনকে ওঝা ডেকে ঝাড়ফুক দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুজানগর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সেলিম মোরশেদ ওই নারীর রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভয়ঙ্কর ওই রাসেল ভাইপারের বাংলা নাম চন্দ্রবোড়া। তবে রাসেল ভাইপার নামেই বেশি পরিচিত। এদের বিষের এত তীব্রতা যে, কাউকে কামড় দিলে খুব কম রোগীই বাঁচে।
জানা যায়, চন্দ্রবোড়া বা উলু বোড়া ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত একটি অন্যতম বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার। এই সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে অনেক দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।
চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটাসোটা, লেজ ছোট ও সরু। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত এক মিটার; দেহের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত হয়। চন্দ্রবোড়া নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত পরিবেশে এবং কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে বাস করে। এরা নিশাচর, এরা খাদ্য হিসেবে ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি ও ব্যাঙ ভক্ষণ করে।
চন্দ্রবোড়া সাপ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দুর্লভ সাপ। নদীয়া বর্ধমান ও উত্তর চব্বিশ পরগনা বর্তমানে বাঁকুড়া জেলার গ্রাম অঞ্চলে এই সাপ ভয়ের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে এ সাপ বেশি পাওয়া যায়।
নদীয়া জেলাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, চীনের দক্ষিণাংশ, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, বার্মা ও ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। তবে চন্দ্রবোড়া সাপ ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা দেয়। এরা বছরের যে কোনো সময় প্রজনন করে। একটি স্ত্রী সাপ গর্ভধারণ শেষে ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা দেয়। তবে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া সাপের ৭৫টি পর্যন্ত বাচ্চা দেওয়ার রেকর্ড আছে।
রাসেল ভাইপার সম্পর্কে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, “আইইউসিএনের ২০১৫ সালের লাল তালিকা অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার বাংলাদেশে সংকটাপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এটি ইঁদুর ও টিকিটিকি খায়। বসতবাড়ির আশেপাশে এদের প্রাচুর্যতা বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে রাসেলস ভাইপার অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে এবং মানুষকে দেখে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে কখনও কখনও আক্রমণও করে।”
জোহরা মিলা বলেন, “এই সাপের বিষ ‘হেমোটক্সিন’ হওয়ায় মাংস পঁচেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাই সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী সাপটি সংরক্ষিত।”