আরও শক্তি জমা করে সুস্পষ্ট লঘুচাপে রুপান্তরিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের (খুলনা ও যশোর) স্থলভাগে অবস্থান করছে। এর চাপ থাকায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো এবং দেশের উপকূলীয় এলাকায় জারি করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের চার বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সেই সাথে আবার চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। অতিভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
এই লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগ ছাড়া সব বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোন কোন জায়গায় অতিভারি বৃষ্টি হয়েছে। সে সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে, সেখানে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজারে ১১৫, মোংলায় ১৫৫, কুতুবদিয়ায় ১২৫, পটুয়াখালীতে ২৫২, খেপুপাড়ায় ২৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন তিনি বলেন, ‘উত্তর বঙ্গোপসাগর ও নিকটবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কাছাকাছি এলাকায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে মৌসুমী বায়ু।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘তবে স্থলভাগে উঠে আসায় সুস্পষ্ট লঘুচাপটি এখন আর শক্তিশালী হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়া সম্ভাবনা নেই। আগামীকালের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে যেতে পারে। যার ফলে আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি থাকবে।’
আজও বহাল রাখা হয়েছে ‘সমুদ্রবন্দরগুলোতে জারি করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত। ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোতেও। সেই সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে আজও অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে’ বলে জানান আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে- রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিও হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে যে,বৃষ্টিপাতের এই প্রবণতা আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল (২৭ জুলাই) মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে, ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর একদিন পূর্বে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ বেলা ১১টায় আবহাওয়ার এক সতর্ক বার্তায় জানানো হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে ও গভীর সঞ্চালনশীল (বজ্রমেঘ) মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, এ সময়ে চট্টগ্রাম, মোংলা, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সাথে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের নিকটবর্তী এসে সাবধানে চলাচল করতে।
সতর্কবাণীতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা, বরিশাল, খুলনাা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।