২ ডিসেম্বর, ২০২৩, শনিবার

শরণার্থী শিবির থেকে এখন বিশ্বকাপ মঞ্চে

Advertisement

জীবনের কোন বাঁকে কী লুকিয়ে, তা কে জানে! চরম অনিশ্চয়তার মাঝে বেড়ে উঠতে থাকা আউয়ের মাবিলও জানতেন না জীবনের গন্তব্য। কিন্তু কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেওয়া অস্ট্রেলিয়ার এই ফুটবলারই এখন বিশ্বকাপ রাঙানোর অপেক্ষায়।

যুদ্ধের কারণে বাবা-মা পালিয়ে দেশ ছাড়েন, তার জন্ম কেনিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে। এমন পরিবারের সদস্য হিসেবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় চাওয়া। কিন্তু জীবনের কোন বাঁকে কী লুকিয়ে, তা কে জানে! চরম অনিশ্চয়তার মাঝে বেড়ে উঠতে থাকা আউয়ের মাবিলও জানতেন না জীবনের গন্তব্য। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে পুরোপুরি বদলে যায় তার জীবন, শরণার্থী শিবির থেকে মাবিল এখন বিশ্বকাপ রাঙানোর অপেক্ষায়।

দোহায় বাছাই পর্বের প্লে-অফের খেলায় পেরুর বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস লড়াই জিতে ৩১তম দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অজিদের টানা পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার মিশনে গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য মাবিল। ২৬ বছর বয়সী এই এই উইঙ্গার পেনাল্টি শুট আউটে গোলও করেছেন। এবার নিজেদের মতো করে গল্প লেখায় দৃষ্টি মাবিলের।

ধংসস্তূপ থেকে ফিনিংস পাখির মতো উড়াল দিয়ে জীবনের রং পাল্টে নেওয়া মাবিলের গল্প শুনলে রূপকথার মতো মনে হতে পারে। গল্পটা আসলেই তেমন। অজি এই ফুটবলারের বাবা-মা সুদানের। কিন্তু যুদ্ধ লেগে থাকায় দেশ ছেড়ে কেনিয়াতে পালিয়ে যান তারা। জায়গা হয় শরণার্থী শিবিরে। সেখানকারই ছোট্ট এক কুটিরে জন্ম মাবিলের।

মাবিল ছোট থাকতেই মাবিলের বাবা-মা পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। বাঁচার মতো পরিবেশ পেয়ে ফুটবলে মন ধরে মাবিলের। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বপ্নের ঠিকানা অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে জায়গা করে নেন তিনি। শুরু হয় স্বপ্নের পথচলা, যেখানে রঙের প্রলেপ পড়লো সোমবার। তাই তো শরণার্থী হিসেবে জায়গা দেওয়ায় ম্যাচের পরপরই অস্ট্রেলিয়ার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

যে দেশে ঠাঁই মিলেছে, সেই দেশের ফুটবল বিশ্বকাপ মিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে অবদান রাখতে পারায় উচ্ছ্বাসের শেষ নেই মাবিলের। ডেনিশ ক্লাব মিডজিল্যান্ডে থেকে ধারে তুর্কিশ ক্লাব কাসিমপাসায় যাওয়া মাবিল বলেন, ‘আমি জানতাম আমি গোল করব। আমি এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানানোর একমাত্র উপায় ছিল এটা।’

পরিবারের উদ্দেশ্যহীন পথচলা ও নিজের জীবনের গল্প জোনাতে গিয়ে মাবিল বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে সুদান থেকে আমার বাবা-মা পালিয়ে যায়। কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরের এক কুটিরে আমার জন্ম হয়। শরণার্থী শিবিরে আমি ও আমার পরিবার যেখানে থাকতাম, সেটার চেয়ে আমার এখনকার হোটেল রুমও বড়। অস্ট্রেলিয়া আমাদের জায়গা দিয়ে আবার গুছিয়ে ওঠার সুযোগ দেওয়ায় আমি এবং আমার পরিবার জীবনে আরেকটি সুযোগ পাই।’

নিরাপদ জীবন পেয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর মাবিল। অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলে অবদান রাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমার মনে হয় অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলে আমার কিছুটা অবদান আছে। আমরা বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। আমি গোল করেছি (পেনাল্টি শুট আউটে), দলের আরও কয়েকজন গোল করেছে। আমরা দল হিসেবে খেলেছি।’

শরণার্থী শিবির থেকে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলে জায়গা করে নেওয়া এবং দলের হয়ে অবদান রাখা নিয়ে মাবিল বলেন, ‘হ্যাঁ, শরণার্থী শিবির থেকে উঠে আসা ছেলেটি হয়তো বড় অবদান রেখেছে। তাই আমার পরিবারের পক্ষ থেকে পুরো অস্ট্রেলিয়াকে ধন্যবাদ জানাই।’

পরিবারের সঙ্গে ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যান মাবিল। ওই বছরই জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে দারুণ সময় কাটে অস্ট্রেলিয়ার। শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় সকারুসরা। এবার নিজেদের অধ্যায়ে সাফল্যের মালা গাঁথতে চান মাবিল।

তার ভাষায়, ‘আমরা আমাদের নিজেদের অধ্যায় রচনা করতে চাই। আমি এটাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখি। নিজেদের গল্প লেখার সময় এখন। পরের বার আমরা সরাসরি বিশ্বকাপে জায়গা করে নিবো। সব সময় কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে এটা করতে হয়, এই দৃশ্য বদলাতে চাই আমরা।’

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement