শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সেলভো কেমিক্যাল। মাত্র সাড়ে চার মাসের কম সময়ের কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩১৬ শতাংশ। গত ৪ এপ্রিল বাজারে শেয়ার দাম ১০ টাকা ৮০ পয়সা। টানা বেড়ে বর্তমান দাম উঠেছে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখে গত জুন মাসে ডিএসই থেকে নোটিশ পাঠানো হয়। সেলভো কেমিক্যাল ছাড়াও কয়েকটি কোম্পানির ক্ষেত্রে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা গেছে।
কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের মাত্র ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। এর আগে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে কি না সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে । তবে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কোম্পানি ৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়।
ডিএসই থেকে পাঠানো নোটিশ পাঠালেও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা থামেনি। বরং ডিএসইর নোটিশের পর দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। ডিএসই ১৫ জুন নোটিশ পাঠানোর সময় কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ২৩ টাকা। এরপর এক মাসের মধ্যে শেয়ার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়। তবে এই দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে ডিএসই থেকে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়া আরেক কোম্পানি ফরচুন সুজ। কোম্পানিটির শেয়ার দাম গত ১১ এপ্রিল ছিল ১৬ টাকা। এখন বেড়ে দাম উঠেছে ৬১ টাকা ৬০ পয়সায়। চার মাসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৮৫ শতাংশ।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে। অবশ্য কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াকে গত জুন মাসে অস্বাভাবিক হিসেবে উল্লেখ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
এ কারণে শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে গত ৬ জুন কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠায় ডিএসই। ডিএসইর নোটিশের জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানায় শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
এরপরও কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা থামেনি। অবশ্য ডিএসই থেকে যখন নোটিশ পাঠানো হয়, তখন কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৩১ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হলেও ডিএসই থেকে আর কোনো নোটিশ করা হয়নি।
ফরচুন সুজের মতো নাম মাত্র লভ্যাংশ দেয়া অথবা বছরের পর বছর কোনো লভ্যাংশ না দেয়া বেশকিছু কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্প্রতি অস্বাভাবিক বেড়েছে। অথচ ভালো লভ্যাংশ দেয়ারের পরও কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম অবিহিত মূল্যের নিচে পড়ে আছে।
ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ শতাংশ করে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অথচ ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ৯ টাকা ৬০ পয়সা এবং গ্রীণ ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ৯ টাকা ৪০ পয়সায় পড়ে রয়েছে।
একইভাবে এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড এবং এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ড ১৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। অথচ এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ডের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা এবং এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ফান্ডের দাম ১২ টাকা ৮০ পয়সায় অবস্থান করছে।
শুধু এই চারটি মিউচ্যুয়াল ফান্ড নয় জুন ক্লোজিং যে ফান্ডগুলো এখনো পর্যন্ত লভ্যা্ংশ ঘোষণা করেছে তার সবগুলোই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়েছে। অথচ তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফান্ডগুলোর দামে পড়েনি। এমনকি লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা বাকি মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ আকর্ষণীয় মুনাফার তথ্য প্রকাশ করেছে। এরপরও ২৪টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দাম ফেস ভ্যালুর নিচে রয়েছে।
একদিকে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়া, অন্য দিকে ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পরও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দামে তার কোনো প্রভাব না পড়াকে অস্বাভাবিক বলছেন বিশ্লেষকরা।