জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সোনার বাংলার স্বপ্নে যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে লালন করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান। বঙ্গবন্ধু একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার সোনার বাংলা আর দুর্নীতিমুক্ত বাংলা এক সূত্রে গাঁথা। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, কালোবাজারি, অর্থপাচার; এই ধরনের অপরাধগুলো সম্পর্কে জাতির পিতা সবসময় অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। তিনি সুযোগ পেলেই দেশবাসীকে এ বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। তার সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেন।
দেশ থেকে দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করতে হবে, জোরালো ভাষায় ঘোষণা দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা দিবসের একটি ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন— ৭১-এ আমি ঘোষণা করেছিলাম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে হবে। আজ ৭৫ সনে আমি আহ্বান জানাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেছিলেন, আমি আইন করব, কাউকে ছাড় দেব না। এও বলেছিলেন, আমি একা পারব না, দেশের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে দুর্নীতিবাজদের উৎখাত করার জন্য। এগিয়ে আসতে হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনের জন্য।
জাতির পিতা জোরালো ভাষায় পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন সামাজিক আন্দোলনের কথা। আরো বলেছিলেন, সামিজিক আন্দোলন কে করবে বাংলাদেশে? তিনি বলেছিলেন, করতে পারে বুদ্ধিজীবী, শ্রমজীবী, পেশাজীবী—দেশের প্রতিটি মানুষ। আর পারে দেশের ছাত্র সমাজ, তরুণ সমাজ। তারুণ্য, ছাত্র সমাজের প্রতি চিরজীবনের আস্থা এবং নিজে তারুণ্যের বলে বলীয়ান এই মহান নেতা আহ্বান জানিয়েছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে নেতৃত্বগ্রহণ করার জন্য।
মুজিবর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে যদি সত্যিকার অর্থেই বঙ্গবন্ধু জাতির পিতার প্রতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই, তাহলে এ দেশের প্রতিটি মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সরকারের। রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সরকারি কাঠামো, প্রশাসনে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিচারিক অঙ্গনে; প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতি বিরোধী চেতনা, দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম মূল ধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তার সহায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন। আর তরুণ সমাজ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে।