২১ জানুয়ারি, ২০২৫, মঙ্গলবার

বঙ্গবন্ধুর প্রতি আন্নার ভালোবাসা

Advertisement

আন্না কোক্কিয়ারেল্লা। লেখক ও গবেষক। সুদূর ইতালির বেনেবেন্ত থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার টানে বার বার ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে। ২০০৩  সালে বন্ধুর সঙ্গে প্রথম বেড়াতে আসেন। এরপরই এ দেশের প্রতি একটা টান আর মুগ্ধতা তৈরি হয়। জানতে পারেন এই মাটির ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছেন ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ২০০৪ সালের দিকে নিজের গবেষণাকর্ম শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে চালিয়ে যান তার গবেষণাকর্ম।

এই মাটি, মানুষ, ভাষা আর জনপদের সঙ্গে গড়ে উঠে তার আত্মিক বন্ধন। সেই বন্ধন এতটাই দৃঢ় যে তার মুখে স্পষ্ট সুন্দর বাংলার যে কাউকেই বিভ্রান্ত করবে। কথা বলার সময় অনর্গল বাংলা বলে যেতে পারা বিদেশি নাগরিক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু আন্না একেবারেই ব্যতিক্রম। এ কারণেই আলাপের সময় কোনো বাক্যের মাঝে একটি ইংরেজি শব্দ বা নিজের মাতৃভাষা সাহায্যের প্রয়োজন পড়েনি তার। বাংলার প্রচলিত অপ্রচলিত সব শব্দই যেন তার দখলে। আন্নার অন্য পরিচয় হলো, তিনি বাংলার বরপুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ও পারিবারিক জীবনের গবেষক। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ইংরেজি ভাষার ইতালীয় অনুবাদক। এখন রীতিমতো বাংলার প্রেমে পরেছেন।

সুফিবাদ নিয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের আসার চিন্তা করেন আন্না। যেই ভাবা সেই কাজ। বাংলাদেশি বন্ধুর সঙ্গে তার প্রথম বাংলার মাটিতে পা দেওয়া। উদ্দেশ্য ভারতের দিল্লি শহর চষে বেড়াবেন, শিখবেন হিন্দি, কাছ থেকে দেখবেন নানা রকম ধর্মীয় আচার। কিন্তু বন্ধুর অনুরোধে অল্পদিন ঘুরলেন ঢাকার দর্শনীয় স্থান, খেলেন ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। জানলেন এ দেশের মানুষের কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাসের কিছু বিষয়। কয়েক দিন বাদে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে ভারত গেলেন। ঘুরলেন দেশটা, তবে চিন্তার মোড় অন্যদিকে।

এরই মধ্যে মনে গেঁথে গেছে বাংলাদেশপ্রীতি। সেখান থেকে যোগাযোগ শুরু হলো। বাংলাদেশি বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে প্রশাসনিক নানা প্রক্রিয়া শেষ করে ২০০৪ সালে ভর্তি হলেন ভাষা ইনস্টিটিউটে। এক বছরের কোর্স শেষ হলো, এরপর আগ্রহ বেড়ে গেল আরও কয়েক গুণ। দ্বিতীয় পার্টে আবার ভর্তি হলেন ২০০৫ সালে। এবার দেশে ফিরে বাংলা নিয়ে চলল গবেষণা, অনুশীলন সবই। পরে আবার ভর্তি হতে চাইলেন কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। তারপর প্রথম দিকে বাংলাদেশের সুফিবাদ নিয়ে গবেষণা চলল কিছুদিন। এরই সঙ্গে বাংলার বিচিত্র ইতিহাস তাকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে ফেলল। তখন তিনি দেখলেন একবিংশ শতকের কেবল শুরু। গবেষণার জন্য মোটামুটি একশ বছর ধরতে হবে। সে হিসাবে বিংশ শতককে বেছে নিলেন তিনি।

গবেষণার বিষয় শেখ মুজিবুর রহমান: ব্রিটিশ শাসন থেকে পাক শাসন ও  ভাষা আন্দোলনসহ বাংলার যত আন্দোলন সবকিছুর সঙ্গে একটি নাম বয়ে এসেছে। আর তা হলো শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯২০ সালে তার জন্ম হয়েছে। এই দেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন। একটি স্বাধীন স্বার্বভৌমত্বের রাষ্ট্র কাঠামো দিয়েছেন তিনি। আন্নার ভাষায়, ‘বঙ্গবন্ধু না জন্মালে এই বাংলাদেশের জন্ম হতো না। তৈরি হতো না এমন দুর্দান্ত ইতিহাস। তিনি অত্যন্ত মেধাবী, সৎ ও সাহসী ছিলেন। বাংলাদেশের জন্য একটি ধ্রুব সত্য ইতিহাস তিনি। তাঁকে যত জেনেছি ততই আকৃষ্ট হয়েছি। তাই আমার গবেষণার বিষয় হলো শেখ মুজিবুর রহমান।’

শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসার প্রধান কারণ হিসেবে আন্নার বক্তব্য- তিনি প্রচণ্ড রকমের সাহসী একজন ব্যক্তি। বাংলাদেশি বন্ধুর মুখেই প্রথম শুনেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নাম। তবে বঙ্গবন্ধুকে যতই জেনেছেন ততই প্রেমে পড়েছেন। ক্ষণজন্মা বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই হয়তো এতকিছু সম্ভব। দিনের পর দিন জেল খেটেছেন। পরিবার তাঁকে আচ্ছন্ন করেনি। নিজের উপার্জনে মনোযোগী হননি। দেশের জন্য সারাক্ষণ চিন্তার পাহাড় নিয়ে ঘুরেছেন।

বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসটাই যেন আন্নার কাছে অনেক বিচিত্র। আন্নার ভালো লাগার জায়গাটাও সেখানে। পৃথিবীর দুটি বিষয় তাকে সবথেকে টানে। এক- নানা রকম সুফিবাদ বা ধর্মীয় আচার, দুই- ইতিহাস। ইতালির বেনেবেন্তের অধীনে ফ্রাননিয়েতো লাবাতে গ্রামে চার বোন, এক ভাই ও বাবা-মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছেন। সাধারণ কৃষক পরিবারেই তার জন্ম। ভাবেননি, বড় হয়ে এত দূরের একটি দেশে নিজের প্রেম খুঁজে পাবেন। সাউথ ইতালির লাসা ভিয়েন্স ইউনিভার্সিটিতে ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ বিষয়ে তার পড়ালেখা। পড়ার সুবাদে ভিন্ন ভাষা, ধর্ম, ইতিহাস নিয়ে তার গবেষণা।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement