‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’—১৫ আগস্ট সকালে রেডিও থেকে এ ঘোষণা সারাদেশে ত্রাস ছড়িয়ে দেয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ঘোষণায় তাই সারাদেশের মানুষের মনে অজানা ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মনে আতঙ্ক এতটাই তীব্র ছিল যে, দেশের কোথাও কোনো প্রতিরোধ গড়ে ওঠেনি। হত্যাকারীরা খুব সহজেই দেশের নিয়ন্ত্রণভার নিজেদের হাতে তুলে নেয়। এমনকি সামরিক বাহিনী ও রক্ষীবাহিনীর দিক থেকেও কোনো প্রতিরোধ দেখা যায়নি। সবাই নিষ্ক্রিয়, আতঙ্কিত হয়ে স্থবির হয়ে পড়েছিল।
সারাদিন রেডিওতে একের পর এক ঘোষণা চলছিল। ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উত্তর প্রান্ত থেকে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞের অভিযান শুরু হয়েছিল বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যেই সে অভিযানের মূল লক্ষ্য অর্জন করে ফেরেছিল চক্রান্তকারীরা।
সন্ধ্যা নামার আগেই বাংলাদেশের নতুন পরিচয়, নতুন রাষ্ট্রপতি, নতুন মন্ত্রিসভা ও নতুন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল খন্দকার মোশতাক, রশীদ ও ফারুকরা। বাইরে কারফিউ চলছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হত্যা করে খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির প্রথম ভাষণে বললেন, সকলের প্রতি বন্ধুত্ব এবং কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়’—এই নীতির রূপরেখার মধ্যে আমরা শান্তি ও প্রগতির পথে আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখব।’ বক্ততা শেষে বললেন, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের পরিবর্তে খন্দকার মোশতাকের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এক অন্ধকার পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ।