১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, বুধবার

ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব না দিলে বিভাগীয় মামলা

Advertisement

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বিগত ৫ বছরের সম্পদ ও আয় ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে বিভাগীয় মামলার ‍মুখে পড়বেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রতি ৫ বছর অন্তর সম্পদ বিবরণী জমা দিতেই হবে। এখন আর শুধু সেই নিয়ম নয়, বিবরণী জমা দেওয়ার পর তা ঠিক আছে কি না তাও যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া কেউ এ নির্দেশনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য সংশোধন করা হচ্ছে ‘‘কর্মচারী (আচরণ) বিধি ১৯৭৯’’। নতুন সংশোধনীতে মনিটরিং ও যাচাইয়ের ক্ষমতা বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে বিধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করাসহ আরও বেশ কিছু সংশোধনী আনা হতে পারে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধি ১৯৭৯-এর বিধি ৩২ নম্বরে স্পষ্টভাবে বলা আছে, এ বিধির কোনো কিছু কোনো কর্মচারী লঙ্ঘন করলে সেটি অসদাচরণের অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। ফলে সম্পত্তির ঘোষণা সংক্রান্ত ১৩নং বিধি লঙ্ঘন করে কেউ যদি প্রতি ৫ বছর অন্তর তার নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীল প্রত্যেকের সম্পত্তির হিসাব জমা না দেন সেটিও মিসকন্ডাক্ট বা অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রিটার্ন জমা দেওয়া হয় আয়কর আইনের অধীনে। সেখানে শুধু যিনি রিটার্ন জমা দেন তার আয় দেখানো হয়। কিন্তু সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার বিধান সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি ১৯৭৯-এর অধীনে। এটি করা হয়েছে কর্মচারীদের দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য। এছাড়া এখানে একজন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী সম্পত্তির ঘোষণা কিংবা সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার সময় স্ত্রী সন্তানসহ তার ওপর নির্ভরশীল প্রত্যেকের সম্পদ বিবরণীও জমা দিতে হয়। ৫ বছরের মধ্যে যেসব সম্পদের বৃদ্ধি ঘটবে তার উৎস সম্পর্কে ব্যাখ্যাও দিতে হবে। ফলে রিটার্ন জমা দেওয়ার সঙ্গে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়াকে গুলিয়ে ফেললে হবে না। এছাড়া বার্ষিক রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় অনেকে অবৈধ পথে অর্জিত অর্থ নানা পন্থায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বৈধ করে থাকেন। সেটি কিন্তু সরকারি কর্মচারী বিধির অধীনে জোড়াতালি দিয়ে বৈধ করা সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষ চাইলে শক্তভাবে যাচাই করে দুর্নীতির বিষয়টি চিহ্নিত করতে পারবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২৪ জুন এ বিষয়ে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেকে সম্পদবিবরণী জমা দেন না। তিনি মনে করেন, আচরণবিধি উপেক্ষা করার সুযোগ কারও নেই। তাই প্রতি ৫ বছর অন্তর প্রত্যেক গণকর্মচারীকে সম্পদবিবরণী জমা দিতেই হবে। তিনি জানান, হয়তো এ বিষয়ে শিগগির আরও একটি তাগিদপত্র পাঠানো হতে পারে।

১৯৭৯ সালে প্রণীত এ সংক্রান্ত বিধিতে প্রতি বছর সম্পদের হিসাব দাখিল করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেটিও ওইভাবে কেউ মানতেন না। এর আগে প্রথমে ছিল চাকরিতে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে তার সম্পদবিবরণী জমা দিতে হতো। পরে ২০০২ সালের এসে এতে সংশোধনী এনে প্রতি বছরের বদলে ৫ বছর অন্তর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান চালু করা হয়। কিন্তু সবকিছু কাগুজে বিধিমালায় পরিণত হয়। বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ ছিল না।

২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বিষয়ে কড়া নির্দেশনা জারি করাসহ এ সংক্রান্ত নির্ধারিত ফরম প্রকাশ করা হয়। ওই সময়ে অনেকে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়া শুরু করেন। প্রথমদিকে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা জমা দেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এসব হিসাবের নথিপত্র সংরক্ষণ করতে বেশ কয়েকটি নতুন আলমারিও কেনা হয়। কয়েকটি ফাইল যাচাই করে বড় ধরনের কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। দেখা যায়, প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক হলেও সেটি তিনি আয়কর রিটার্নে দাখিল করেননি। দুদকের ভয়ে সম্পদবিবরণীতে উল্লেখ করেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতে সব কিছুতে ভাটা পড়ে যায়। আসলে সর্ষের মাঝে ভূত ধরা পড়ার কারণে পরে সম্পদবিবরণী জমা দেওয়া নিয়ে প্রভাবশালী কর্মকর্তারা পিছু হটেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement