১৮ মার্চ, ২০২৫, মঙ্গলবার

সব আমলে ক্ষমতাধরদের ঘনিষ্ঠ হেলেনা, অন্তত ১৬ ক্লাবে ওঠাবসা

Advertisement

বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও নারী উদ্যোক্তা হেলেনা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টারকে ঘিরে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি।

জয়যাত্রা টিভির সাংবাদিক নিয়োগের নামে টাকা আদায় থেকে শুরু করে অপেশাদার প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হয়রানিরও অভিযোগ রয়েছে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এছাড়া লাইসেন্স না থাকলেও অবৈধভাবে সিঙ্গাপুর ও রাশিয়ান স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জয়যাত্রা টিভির ডাউনলিংক করে সারা দেশে ক্যাবল (ডিশ) লাইনে চালানোর অভিযোগ রয়েছে জয়যাত্রা টিভির বিরুদ্ধে। ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বার বার বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচিতও হন তিনি।

বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অপরাধে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি থেকে সদ্য পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। র‍্যাব জানায়, মাদক ও হরিণের চামড়া রাখায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা গেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীরের রাজধানীর প্রায় ১৬টি ক্লাবে আসা যাওয়া ছিল। তিনি সবগুলো ক্লাবের সদস্য না হয়েও ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে সেখানে যেতেন। সেখানে তিনি অবৈধভাবে মদ পান করতেন।

ক্লাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, কুমিল্লা ক্লাব, গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, বিজিএমইএ অ্যাপারেল ক্লাব, বোট ক্লাব, গুলশান লেডিস ক্লাব, উত্তরা লেডিস ক্লাব, গুলশান ক্লাব, গুলশান সোসাইটি, বনানী সোসাইটি, গুলশান হেলথ ক্লাব, গুলশান নর্থ ক্লাব ও বারিধারা ক্লাব।

সম্প্রতি ‌‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামে একটি সংগঠনের পোস্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পোস্টারে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মনিরের নাম উল্লেখ করা হয়। এ সংগঠনে সদস্যপদের দেওয়ার কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছে তিনি টাকা দাবি করেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির প্রয়াত এইচ এম এরশাদ, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবি দিয়ে ফেসবুকে হেলেনা নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজনীতির নামে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছেন।

কে এই হেলেনা জাহাঙ্গীর?

হেলেনা জাহাঙ্গীর ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সদস্য ও নির্বাচিত পরিচালক। পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএরও সক্রিয় সদস্য তিনি।

জয়যাত্রা নামে একটি আইপি টেলিভিশনেরও মালিক তিনি। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছেন রোটারি ক্লাবের একজন ডোনার হিসেবে। প্রিন্টিং, অ্যামব্রয়ডারি, প্যাকেজিং, স্টিকার এবং ওভেন গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার কর্মী কাজ করছেন তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।

আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ছাড়াও কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকটি বিদেশযাত্রার সফরসঙ্গীও হয়েছিলেন তিনি।

তবে হেলেনা জাহাঙ্গীর আগে জাতীয় পার্টিতে এবং তারও আগে বিএনপির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে শোনা যায়। ওই দুটি দলের প্রধান খালেদা জিয়া এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।

হেলেনা জাহাঙ্গীরের জন্ম ১৯৭৪ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার তেজগাঁওয়ে। বাবা মরহুম আবদুল হক শরীফ ছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। জন্ম কুমিল্লায় হলেও হেলেনার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের হালিশহরের মাদারবাড়ী সদরঘাট এলাকায়। পড়াশোনা স্থানীয় কৃষ্ণচূড়া স্কুলে। চাকরিসূত্রে তার বাবা রাশিয়ায় চলে গেলে মায়ের সঙ্গে গ্রামে ফিরে যান হেলেনা।

হেলেনার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম একজন ব্যবসায়ী। ১৯৯০ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের ছয় বছর পর ১৯৯৬ সালে রাজধানীর মিরপুর ১১-তে একটি ভবনের দুটি ফ্লোর নিয়ে হেলেনা শুরু করেন প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি ব্যবসা। নিট কনসার্ন প্রিন্টিং ইউনিট লিমিটেড দিয়ে শুরু করে জয়যাত্রা গ্রুপের আওতায় একে একে তিনি গড়ে তোলেন জয় অটো গার্মেন্টস লিমিটেড, জেসি এমব্রয়ডারি অ্যান্ড প্রিন্টিং এবং হুমায়রা স্টিকার লিমিটেড। সবকটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement