২৯ মার্চ, ২০২৪, শুক্রবার

৩০০ বিঘা জমির আলু নিয়ে বিপদে চাষিরা

Advertisement

পরিবহন সমস্যার কারণে মহাসংকটে পড়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলার মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামের শতাধিক আলু চাষি। এলাকার আলু ক্ষেতসংলগ্ন এক কিলোমিটার সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির আলু নিয়ে এমন দুর্ভোগে পড়েছেন চাষিরা। বিঘা প্রতি ১২০ মণ থেকে ১৫০ মণ ফলন হয়েছে আলুর। ওই এক এলাকায় এবার আলু উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার মণ। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ খারাপ হওয়ায় ভালো ফলন পেয়েও হাসি নেই কোনো চাষির মুখে।

তাছাড়া, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় পাইকাররাও ঢুকছে না গ্রামটিতে। আলু তোলা এবং পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ পড়ায় কিছু কিছু চাষি আলু তুললেও অধিকাংশ চাষিই তাদের আলু তুলছেন না। এখনো ২০০ বিঘারও বেশি জমিতে আলু পড়ে আছে। সময় মতো না তোলায় আলুতে পঁচন ধরেছে এবং পোকায় নষ্ট করছে। এমন পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা একেকজন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করে লোকসানে পড়বেন বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাষিরা। সঠিক সময় তুলতে পারলে এবছর প্রায় আড়াই কোটি টাকার আলু বিক্রি হতো এই একটি গ্রাম থেকেই। বর্ষ মৌসুম আসন্ন, তাই এখনই আলু তুলে সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে না পারলে পুরোটাই ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মধ্য খোন্তাকাটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল মাঠজুড়ে আলু ক্ষেত। সেই ক্ষেতের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান বাদশা মিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণমুখী পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন সড়ক। নতুন করে কার্পেটিং বরাদ্দ হওয়ার পর পূর্বের ইট সলিং সেই সড়কটির পুরনো ইট তুলে এবং মাটি খুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে দুই বছর ধরে। যে কারণে এলাকাবাসীর চলাচল ও কৃষিপণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না।

সময় পার হলেও আলু তুলছেন না বেশিরভাগ চাষি। কিছু কিছু ক্ষেতের আলু গাছের চেহারা (রঙ) সবুজ থাকলেও বেশিরভাগ গাছই শুকিয়ে গেছে। বিশাল এই মাঠে আলু তুলতে দেখা গেছে মাত্র কয়েক জন চাষিকে। তোলা আলুর অর্ধেকই পঁচন ও পোকায় খাওয়া দেখা গেছে। সেই আলু বস্তায় ভরে ক্ষেত থেকে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার মাথায় করে মূল সড়কে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

আলু চাষি মো. টিপু সেপাই জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে সব মিলিয়ে ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি একটি আলুও তুলতে পারেননি। তুলতে এবং পরিবহনে যে খরচ হবে আলু বিক্রি করলে সেই পরিমাণ লাভ হবে না। তাই আলু তুলছেন না তিনি। রাস্তা খারাপ থাকায় কোনো পাইকার আসছেন না। যা দু-একজন আসছেন তারা পরিবহন খরচ বেশি পড়ার কারণে আলুর দাম কম বলছেন।

চাষি রুবেল আকন জানান, তিনি ৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত দুই বিঘা জমির আলু তুলেছেন। বিঘায় ১২০ মণ ফলন হয়েছে তার। সঠিক সময় আলু তুলতে পারলে সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ মণ আলু পেতেন। কিন্তু দেরিতে তোলায় বেশিরভাগ আলুতে পঁচন ধরেছে এবং পোকায় নষ্ট করেছে। এতে তার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লোকসান হবে।

লিটন সেপাই জানান, তার ৩ বিঘা জমির আলু প্রায় সবই পোকায় শেষ করেছে। রাস্তার কারণে আলু তুলতে দেরি হওয়ায় এমন হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের লাখ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। গত বছরও একইভাবে তারা লোকসান দিয়েছেন। খোকন সেপাই জানান, রাস্তাই তাদের সব শেষ করে দিয়েছে। পাইকাররা ঢুকতে চায় না। সব আলু ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।

চাষি মাসুম হাওলাদার জানান, তার ৬ বিঘা জমিতে প্রায় ৭০০ মণ আলু পেয়েছেন। কিন্তু তার পরিবহন খরচই হয়েছে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা। যেভাবে আলুর ফলন হয়েছে, রাস্তা ভালো থাকলে তারা সবাই বেশ লাভবান হতেন।

চাষিরা জানান, ২৫-৩০ বছর আগে উপজেলার মধ্যে প্রথম আল চাষ শুরু হয় এই মধ্য খোন্তাকাটা গ্রাম থেকেই। ব্যাপক আলু উৎপাদন হওয়ায় এই গ্রামটিকে দ্বিতীয় মুন্সীগঞ্জ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন তারা। মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক তাদের সেই খ্যাতি ধ্বংস করছে। মাত্র এক কিলোমিটার সড়কের কারণে এ বছর তারা মারত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। সড়কটি দ্রুত নির্মাণের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকা মধ্য খোন্তাকাটায় প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ হয়। কিন্তু সেখানে একটি সংযোগ সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে চাষিরা আলু তুলতে পারছে না। যার ফলে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা সে পরিমাণ লাভ করতে পারবে না। এতে কৃষকরা খুবই সমস্যা আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সড়কটি যাতে দ্রুত নির্মাণ কার হয় সেই চেষ্টা করছি।

কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, এ বছর আমাদের উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২২ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন হয়েছে।

সড়কটির কারণে চাষিদের এবং এলাকাবাসীর যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফেরদৌস আলম বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দীর্ঘদিন সড়কের কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত যতে কাজ শেষ হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement