১৯ এপ্রিল, ২০২৪, শুক্রবার

আগামী ২০ বছর পর এআই

Advertisement

ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটি এরই মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপটটা কিন্তু কৃত্রিম নয়। এর যে প্রভাব পড়ছে বা পড়তে যাচ্ছে, সেটা পুরোদস্তুর আসল। গুগল ও মাইক্রোসফটের চীন শাখার সাবেক প্রধান কাই-ফু লি তার ‘এআই-২০৪১’ বইয়ে এআই নিয়ে কিছু পূর্বাভাস দিয়েছেন। সেটা অবলম্বনে লিখছেন ধ্রুব নীল

এআই শব্দটি শুনলে এখনো আমাদের মাথায় ভেসে আসে সায়েন্স ফিকশন ছবির দৃশ্য। অবশ্য সায়েন্স ফিকশনও সত্যি হয়। এইচি ওয়েলস বা জুলভার্নদের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেছে। আবার স্ট্যানলি কুবরিকের আ স্পেস অডিসির ধারে কাছেও যেতে পারেনি নাসা। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যে ছোটখাটো রেনেসাঁ ঘটেছে সম্প্রতি, সামনের দিনগুলোতে সেটা যে অনেক কিছু দুমদাম করে বদলে দেবে না, তা-ও নয়। কী বদলে দেবে? রোবটেরা পৃথিবী দখল করবে? বদমেজাজি কোনো কম্পিউটার নিয়ে নেবে রাষ্ট্রক্ষমতা? কাই-ফু লি এসব নিয়ে চিন্তা করছেন না। তার মতে এআইয়ের এসব করার ঠেকা পড়েনি, বা এসব ঘটানো আদৌ সম্ভব নয়। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাটি কৃত্রিমই। মন চাইল আর হুট করে একটা কিছু ঘটিয়ে দিলাম, লাইনের পর লাইন কোড লিখে এমনটা সম্ভব নয়। মূলত চ্যাটজিপিটি বা ডাল-ই যা ঘটাচ্ছে, সেটা এক ধরনের বুদ্ধিমত্তার ইল্যুশন। ডিপ লার্নিং প্রক্রিয়ার ভোজবাজি।

স্বাস্থ্য

আমরা জন্ম থেকে কত গিগাবাইট ডাটা দেখেছি আর শিখেছি সেটার হিসাব কেউ করেনি। এআইয়ের বেলায় করতে হয়। চ্যাটজিপিটি যখন উন্মুক্ত হয়, তখন তার ভেতর ছিল ৫৭০ গিগাবাইট তথ্য। এ তথ্যের উৎস হলো বই, বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও উইকিপিডিয়া। এসবের সঙ্গে ব্যক্তির নিজস্ব তথ্য জুড়ে দিলে এআইয়ের পক্ষে কোনো রোগ বের করা এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি বলে দেওয়াটা হবে ন্যানোসেকেন্ডের ব্যাপার। আবার ব্যক্তির ডিএনএ সিকোয়েন্স বুঝে সেই অনুযায়ী বিশেষ প্রোটিন বা ডায়েট চার্ট তৈরিতেও এআই আশা দেখাচ্ছে। তবে এখনো এআই যেহেতু টুকটাক ভুল তথ্য দিচ্ছে তাই ডাক্তারের ভূমিকায় নামতে একে পার হতে হবে আরও একগাদা ছাঁকনি। তবে জটিল ধরনের অস্ত্রোপচারে মানুষের সহকারী হিসেবে জিপিটি-৩ লেভেলের বুদ্ধিমান রোবট সহকারী কিন্তু দারুণ কাজে আসবে।

পড়াশোনা

এক চ্যাটজিপিটির ভান্ডারেই আছে ৩০ হাজার কোটি শব্দ। গুগলের জিপিটি-৩ এখন মানুষের মতোই কথা বলতে পারে। সুতরাং এসবের সঙ্গে কারিকুলামটা যোগ করে দিলেই হলো। ক্লাসরুমে অনায়াসে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে পারবে রোবট-শিক্ষক। আর এটা সেটা প্রশ্নের উত্তর ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা যে কেমন চালিয়ে যেতে পারবে সেই নমুনা এখনকার চ্যাটবটগুলোই দেখাচ্ছে। এর বাইরেও, শিশুকে একদম ছোটকাল থেকে শব্দের নিখুঁত উচ্চারণ শেখানো ও তার সঙ্গে মানুষের মতো কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার কাজটাও চাপতে পারে এআইয়ের ঘাড়ে। মোটকথা, পড়াশোনা ও শৈশবের মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়ন নিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন অনেক অভিভাবক। অবশ্য এমন একটা নিখুঁত বিশ্বে শিশুরা ঠিক কতটা মানুষ হয়ে উঠবে, সেটা নিয়ে সামান্য খুঁতখুঁতে ভাবটা থেকেই যায়।

স্বয়ংক্রিয় গাড়ি

আগামী ২০ বছরে আর যাই ঘটুক, দুনিয়াটা রোবটিক হয়ে যাবে না। এআইকে ‘মানুষ’ বানাতে হলে তার ভেতর সেই পর্যায়ের ইন্দ্রিয়ও থাকা চাই। মানুষের মতো স্পর্শ করে একটা কিছু এখনো বোঝার মতো সেন্সর এখনো তৈরি হয়নি কোনো রোবটে। মানুষের মতো দেখা ও সেই অনুযায়ী মিলি সেকেন্ডের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে যে কোনো রাস্তায় যখন তখন স্বয়ংক্রিয় গাড়ি চালানোটাও সম্ভব নয় রোবটের পক্ষে। বাসাবাড়িতে হোম ডেলিভারিতে যে ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলো আরও করিতকর্মা হতে পারে ঠিকই, তবে এল-৫ স্তরে (মানুষের কিছু বলে দিতে হবে না) পৌঁছানোর মতো গাড়ি সহসাই আসছে না রাস্তায়। শুধু উন্নত যে শহরগুলো অগমেন্টেড রিয়েলিটির আওতায় এসে যাবে, সেখানে আপনি আরামসে পেছনের সিটে বসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারবেন গন্তব্যে। রাস্তা বুঝে ঘন ঘন রুট বদলানোর মতো অ্যাপের কাজ জোরেশোরেই চলছে।

নতুন খাবার

কদিন আগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ৫০ বছরের পুরোনো একটি বায়োলজির ধাঁধার সমাধান জানা গেছে। সেটা হলো প্রোটিন ফোল্ডিং। এর বাইরে বিভিন্ন মলিকিউল তৈরি ও একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে নতুন কিছু তৈরিতেও সক্ষমতা দেখিয়েছে গুগলের সুপার কম্পিউটার। ধারণা করা হচ্ছে বায়োলজির যাবতীয় তথ্যওয়ালা এসব এআই ভবিষ্যতে সিনথেটিক, নিরাপদ ও নতুন স্বাদের খাবার বানাতে পারবে ল্যাবরেটরিতেই। এতে করে আপনার চাকরি থাকুক বা না থাকুক, ঘরে একটা খাবার তৈরির মেশিন থাকলেই হবে।

আপাতত এআই নিয়ে অত দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কেবল রচনা লেখকদের চাকরি নাই হয়ে যেতে পারে সামনের পাঁচ-দশ বছরে, তবে নতুন করে কোনো কৌতুক কিংবা গা ছমছমে ভূতের গল্প সহসাই লিখতে পারবে না এআই।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement