আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটি ক্রমেই গৃহযুদ্ধের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন জেনারেল এবং আফগানিস্তানে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন ফোর্সের কমান্ডার অস্টিন স্কট মিলার। মঙ্গলবার জেনারেল স্কট মিলার বলেন, বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হলে দেশটি ‘খুব কঠিন সময়ে পড়তে যাচ্ছে’। জেনারেল স্কট মিলার আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন শীর্ষ কমান্ডারের এমন মন্তব্যের আগের দিন জাতিসংঘ থেকেও সতর্কবার্তা এসেছে। সোমবার জাতিসংঘ বলেছে, আফগানিস্তানে তালেবান একের পর এক জেলা দখলে নেওয়ায় পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেনারেল অস্টিন স্কট মিলার বলেন, এমনটি চলতে থাকলে গৃহযুদ্ধের পথেই পরিস্থিতি এগোবে। বিশ্বের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেমন সমঝোতা হয়েছিল, সে মাত্রায় সংঘাত কমাতে তালেবান ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন এই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা।
তালেবান গোষ্ঠী একের পর এক নতুন জেলা দখল করার পর সম্প্রতি আফগানিস্তান নিয়ে মুখ খোলে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই সংস্থাটির মতে, তালেবানের এই অগ্রযাত্রার কারণে আফগানিস্তানে ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির’ সৃষ্টি হতে পারে। এরপরই মার্কিন সামরিক বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ এই কমান্ডার তাদের চলে যাওয়ার পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানালেন।
চলমান এই সংঘর্ষ ও সহিংসতার জন্য তালেবানকে দায়ী করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা তারা মানছে না। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে তালেবানরা ১০০টিরও বেশি জেলা সরকারি বাহিনীর কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে বলে দাবি করেছে।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত দেবোরাহ লিয়ন্স সম্প্রতি জানান, দেশটির মোট ৩৭০টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি জেলা ইতোমধ্যেই নিজেদের দখলে নিয়েছে তালেবান। তিনি আফগানিস্তানে ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘তালেবানের দখলে যাওয়া জেলাগুলো আসলে আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর পার্শ্ববর্তী এলাকা। অর্থাৎ তালোবান গোষ্ঠী সেখানে নিজের যোদ্ধাদের মোতায়েন রাখছে এবং বিদেশি সেনারা পুরোপুরি সরে যাওয়ার পরই তারা বাকি এলাকাগুলোও দখল করবে।’
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। সেই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এরপরই আল কায়দার পৃষ্ঠপোষক তালেবান গোষ্ঠীকে দমন করতে আফগানিস্তানে হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র ও সামরিক জোট ন্যাটো।
অভিযানে দেশটির তৎকালীন তালেবান সরকারের পতন হলেও তালেবান গোষ্ঠীকে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের এই যুদ্ধে ২ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা এবং এক লাখেরও বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধটির পেছনে দেশটি এ পর্যন্ত ব্যয় করেছে প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার।