২৫ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

ইতিকাফ কী? ইতিকাফে যা করা যাবে, যা করা যাবে না

Advertisement

মহান আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ লাভ ও পাপমোচনের আরেকটি সুযোগ হলো পবিত্র রমজান মাস। এ মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করে প্রতিবছরই ইতিকাফ করতেন।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমজানের শেষ দশকে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৭১)

 ইতিকাফ কী? ইতিকাফের পরিচয়

ইতিকাফ আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জাগতিক কাজকর্ম ও পরিবার-পরিজন থেকে বিছিন্ন হয়ে বিশেষ সময়ে ও বিশেষ নিয়মে আল্লাহর ইবাদতের নিয়তে নিজেকে আবদ্ধ রাখাকে ইতিকাফ বলে।

ইতিকাফের প্রকারভেদ-

ইতিকাফ ৩ প্রকার-

১. সুন্নত ইতিকাফ

২. ওয়াজিব ইতিকাফ

৩. নফল ইতিকাফ

. সুন্নত ইতিকাফ : ২০ রমজানের সূর্য অস্ত যাওয়ার আগমুহূর্ত থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা। এ ধরনের ইতিকাফকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া বলা হয়। গ্রাম বা মহল্লাবাসীর পক্ষে কোনো এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ইতিকাফ করলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।

. ওয়াজিব ইতিকাফ : নজর বা মানতের ইতিকাফ ওয়াজিব। যেমন কেউ বলল যে আমার অমুক কাজ সমাধান হলে আমি এত দিন ইতিকাফ করব অথবা কোনো কাজের শর্ত উল্লেখ না করেই বলল, আমি একদিন অবশ্যই ইতিকাফ করব। যত দিন শর্ত করা হবে, তত দিন ইতিকাফ করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত।

. নফল ইতিকাফ : সাধারণভাবে যেকোনো সময় ইতিকাফ করাকে নফল ইতিকাফ বলে। এর জন্য কোনো দিন কিংবা সময়ের নির্ধারিত নেই। অল্প সময়ের জন্যও ইতিকাফ করা যেতে পারে। এ জন্য মসজিদে প্রবেশের আগে ইতিকাফের নিয়ত করে প্রবেশ করা উত্তম।

ইতিকাফ করা স্থান-

ইতিকাফের সর্বোত্তম স্থান হলো পবিত্র মসজিদুল হারাম। এরপর মসজিদে নববী। এরপর যথাক্রমে বাইতুল মাকদিস, জুমা আদায়ের মসজিদ ও মহল্লার মসজিদে। নারীদের মসজিদের বদলে ঘরে ইতিকাফ করা উত্তম। ঘরের নির্দিষ্ট নামাজের স্থানে তারা ইতিকাফ করতে পারে।

ইতিকাফ অবস্থায় করণীয়-

১. বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা
২. কোরআন তিলাওয়াত করা

৩. দ্বিনি আলোচনা করা ও শোনা

 ৪. আল্লাহর জিকির করা

৫. দোয়া করা

৬. ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা।

ইতিকাফে যা বর্জনীয়

১. একেবারেই চুপচাপ বসে থাকা, ২. ঝগড়াঝাঁটি বা অনর্থক কথাবার্তা বলা, ৩. গিবত বা পরনিন্দা করা, ৪. মালপত্র মসজিদে এনে বেচাকেনা করা।

ইতিকাফ ভেঙে যায় যেসব কারণে-

১. বৈধ প্রয়োজনে বের হয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলম্ব করা, ২. শরিয়ত অনুমোদিত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদের বাইরে যাওয়া, ৩. স্ত্রী সহবাস করা, ৪. অসুস্থতা বা ভয়ের কারণে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।

ইতিকাফ অবস্থায় যেসব কাজ বৈধ-

১. মসজিদে পানাহার করা, ২. শৌচকর্ম বা পেশাব-পায়খানার জন্য বাইরে যাওয়া, ৩. ফরজ গোসলের জন্য বাইরে যাওয়া, ৪. জুমার নামাজের জন্য এতটুকু সময় নিয়ে বের হওয়া, যাতে জামে মসজিদে গিয়ে খুতবার আগে দুই/চার রাকাত সুন্নত আদায় করতে পারে, ৫. আজান দেওয়ার জন্য বাইরে যাওয়া।

ইতিকাফ বিষয়ে প্রচলিত ভুল-

শরিয়ত মতে, পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফ করানো যায় না। কিছু এলাকায় দেখা যায়, রমজানের শেষ ১০ দিনে এলাকার কেউ ইতিকাফ না করলে কোনো ব্যক্তিকে খাবার ও পারিশ্রমিক দিয়ে ইতিকাফ করানো হয়। কিন্তু এ নিয়মে ইতিকাফ করানো শুদ্ধ নয়। ইতিকাফ অবিনিময়যোগ্য একটি ইবাদত। তাই ইতিকাফের জন্য বিনিময় নেওয়াও জায়েজ নেই।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement