২৩ এপ্রিল, ২০২৪, মঙ্গলবার

ইবিতে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক অডিও ফাঁস, জিডি হয়েছে থানায়

Advertisement

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ‘কণ্ঠ সদৃশ’ একাধিক অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ‘ফারাহ জেবিন’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পরপর তিনটি ফোনালাপের অডিও পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘‘এভাবেই নিয়োগ বোর্ডের আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করেন ড. শেখ আবদুস সালাম।” মুহুর্তেই রেকর্ডগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

এই ঘটনায় শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান। জিডি নাম্বার ৬৭২। জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননূর যায়েদ।

‘ফারাহ জাবিন’ আইডি থেকে পোস্ট করা প্রথম রেকর্ডের ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘‘গত ২৫ অক্টোবর গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় তার পছন্দের প্রার্থী অলিউর রহমান অলিকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পুর্নবিজ্ঞপ্তি দিয়ে সেই প্রার্থীকে আবার নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রশ্ন সরবরাহ করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। অলিসহ আরো দুইজন প্রার্থীকে প্রয়োজনে টাকা দিয়ে হলেও আবেদন করাতে বলেন ভিসি শেখ আবদুস সালাম। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ইবির গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য হয়ে নিয়োগ বোর্ডের আগে প্রশ্ন ফাঁস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত পদকে কলঙ্কিত করেছেন। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যত নিয়োগ বোর্ড হয়েছে (শিক্ষক-পরিবহন অফিসসহ) সবগুলোর আগেই তিনি টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে এসব পদে নিয়োগ দিয়েছেন। সামনে যে নিয়োগ বোর্ড হবে সেগুলোরও প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়েছেন তিনি।’’

৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের প্রথম অডিওটিতে অলি নামের প্রার্থীকে নিয়োগ বোর্ড স্থগিত হওয়া সম্পর্কে ড. সালামকে বলতে শোনা যায়, “তিনজন অ্যাপ্লিকেন্ট ছিলো, তিনজনই হলে (উপস্থিত) হয়ে যেত। বোর্ডটা ই (স্থগিত) হইছে এই কারণে। আমরা ৩০ তারিখের পরই পুনর্বিজ্ঞাপনে যাচ্ছি। এতে ডিজঅ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর কোন কারণ নাই। আপনি শুধু এর পরে তিনজন ক্যান্ডিডেট গোছান যে, তারা অ্যাপ্লাই করবে আপনি তাদের পয়সা দিয়ে দিবেন এবং ওরা এখানে জাস্ট অ্যাপিয়ার করবে। আর কিচ্ছু না। ডোন্ট গেট ওরিট। ট্রেজারার আমাকে বলেছে এটা। কারণ তিনজন হলে কিন্তু আপনাদের কালকে আসতে বলতাম, বলতাম যে ‘যান’, ওকে দেখতামও না। আচ্ছা আপনি সব দিয়ে রেডি থাকেন। যেদিন সব দিয়ে দিবেন তার ঠিক একুশ দিনের মাথায় গোছায় দিব।”

এদিকে ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের দ্বিতীয় অডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘‘এভাবেই নিয়োগ বোর্ডের আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করেন ড. শেখ আবদুস সালাম।” অডিওটিতে তাকে বলতে শোনা যায়, ”২০২৩ সালে বাংলাদেশের জন্য দশটি চ্যালেঞ্জ, চ্যালেঞ্জগুলো ইংরেজিটা করেন, এটা হয়তো কনটেমপোরারি বিষয়ে, পরীক্ষায় (থাকবে?)। আর খুব বেসিক কনসেপ্টস গুলা আছে না? কমিউনিকেশন অ্যাপ্রিহেনশন, তারপর গত ইসে (পরীক্ষায়) যা যা ছিলো। রাইট টু ইনফরমেশন ও চ্যালেঞ্জগুলা ইংরেজিতে আরকি। একলাইন দুই লাইন করে ছোট ছোট করে। বুঝতে পারছেন?’’

এছাড়া আরো একটি পর্বে অডিওটিতে পরীক্ষার প্রশ্ন সংক্রান্ত আলোচনায় ড. সালাম বলেন, “আমি তো আপনাকে সোর্সটা সহ দিয়েছি। দেখেন ওখানে। খুব চমৎকার করে একবারে চুম্বক লেখা আছে আরকি, দশটা আইটেম। এরকম দশটা ইস্যু কি? এরকম যদি কাউকে লিখতে দেয়, তাহলে সেটার একটা ইংরেজিতে প্রস্তুতি রাখেন। এখন আমি এইটুক যা বললাম। আর ট্রেজারারের সাথে একটু যোগাযোগ রাখেন। আচ্ছা যা হোক ওনাকে একটু বুঝায়ে বলেন। আর ওনাদের সাথে একটু যোগাযোগ করে আইসেন।”

অডিওতে সরবারহকৃত প্রশ্নগুলো নিয়োগ পরীক্ষার জন্য চাকরীপ্রত্যাশী অলিকে সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ফোনালাপে অপর পক্ষের কোন কথা শোনা যায়নি অডিওতে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, “উপাচার্য স্যার আমাকে জিডি করতে বলেছেন। তাই ইবি থানায় জিডি করেছি।” কি কারণে জিডি করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অডিও পোস্টদাতার অ্যাকাউন্টটি আইডেনটিফাই করতে জিডি করা হয়েছে।” অডিওটি উপাচার্য ড. সালামের কি না? জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “এটা তো আমি জানিনা, এটা প্রশাসন বের করবে।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সাড়া মেলেনি। পরে রাত ৯টার দিকে আবার ফোন করলে তিনি কেটে দেন। এরপর রাত ১১টার দিকে আবারও যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদনকারীরা হলেন ড. মো অলিউর রহমান, মোশারফ হোসেন ও বিউটি মন্ডল। এসময় বোর্ডে সর্বনিম্ন সংখ্যক আসন পূর্ণ না হওয়ায় সেই বোর্ড স্থগিত করা হয়। পরে গত ২ ডিসেম্বর আবারো পুনর্বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এই নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement