২৫ এপ্রিল, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

ইরানে হিজাববিরোধী বিক্ষোভকারীদের পাশে সাবেক প্রেসিডেন্ট

Advertisement

টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা হিজাববিরোধী বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। দেশটির রক্ষণশীল নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা করলেও বিক্ষোভ এখনও চলছেই, আসছে প্রাণহানির তথ্যও। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইরানের সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট।

আন্দোলনে সমর্থনের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের দাবিও মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার এই মন্তব্যকে নজিরবিহীন বলে মনে করা হচ্ছে। (৭ ডিসেম্বর) বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামি দেশটির সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের প্রশংসা করে প্রকাশ্যেই এক বিরল মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে ‘খুব দেরি হওয়ার আগে’ বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

৭৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ খাতামি বলেন, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ‘সুন্দর স্লোগান’ এটাই দেখায় যে, ইরানি সমাজ একটি উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারেরও সমালোচনা করেন।

বুধবার ছাত্র দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করা হয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

মূলত গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই বিক্ষোভে টালমাটাল ইরান। হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের দায়ে গত (১৬ সেপ্টেম্বর) ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি ইরানি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজত থেকে কোমায় নেওয়া হয় এই তরুণীকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেদিনই মারা যায় মাহসা আমিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, মাহসা আমিনিকে তেহরানে নৈতিকতা পুলিশ তার চুল সঠিকভাবে না ঢেকে রাখার অভিযোগে আটক করেছিল। ২২ বছর বয়সী ইরানি কুর্দি এই তরুণী গ্রেপ্তার হওয়ার তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর থেকেই ইরানজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে।

ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ওই তরুণী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তবে ভুক্তভোগীর পরিবার এই বিষয়ে বিরোধিতা করে বলেছে, তাকে নৈতিকতা পুলিশ মারধর করেছে।

বিবিসি বলছে, নারী-নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভ ইরানের ৩১টি প্রদেশের ১৫০টিরও বেশি শহর এবং ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে এটিকে পশ্চিম এশিয়ার এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ ইরানের নেতৃত্ব দেশে চলমান এই বিক্ষোভকে বিদেশি শত্রুদের প্ররোচিত ‘দাঙ্গা’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছে এবং বিক্ষোভকারীদের ‘কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে’ নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সির (এইচআরএএনএ) তথ্য অনুসারে, বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৭৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন এবং ৫৮৬ জন শিক্ষার্থীসহ ১৮ হাজার ২১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অবশ্য বিক্ষোভ-সহিংসতায় ৬১ জন নিরাপত্তা কর্মীও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি বলছে, মোহাম্মদ খাতামি একজন সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত এবং ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে দুই মেয়াদে ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চলমান পরিস্থিতিতে দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি ‘সম্ভবত নজিরবিহীন’ এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ছাত্র ও অধ্যাপকদের জড়িত থাকার প্রশংসা করেছেন।

একইসঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় তারা যে শাস্তি ও বিধিনিষেধের মুখোমুখি হয়েছে তারও সমালোচনা করেছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।

খাতামি বলেন, ‘স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এছাড়া নিরাপত্তা বজায় রাখার অজুহাতে স্বাধীনতা পদদলিত হচ্ছে, বা সেই নিরাপত্তা … স্বাধীনতার নামে উপেক্ষা করা হচ্ছে।’

প্রেসিডেন্ট রাইসির সরকারকে সরাসরি সম্বোধন করে তিনি বলেন: ‘বিক্ষোভকারীদের এই উপস্থিতিকে প্রশংসা করতে আমি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিচ্ছি এবং এটিকে অন্যায়ভাবে মোকাবিলা না করে, তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে তাদের সাহায্যে শাসনের ভুল দিকগুলোকে চিহ্নিত করতে এবং সুশাসনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’

এদিকে পৃথক ঘটনায় ইরানের বিচার বিভাগ বলেছে, পাঁচ বিক্ষোভকারীকে ‘ব্যাপক দুর্নীতির’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement