১৬ এপ্রিল, ২০২৪, মঙ্গলবার

ঈদের দেড় মাস আগেই বাড়ল মসলার দাম

Advertisement

আমদানিকারকেরা বলেছেন, অল্পসময়ের মধ্যেই গরম মসলার বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ালে লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।

ঈদুল আযহার বাকি আরো দেড় মাস। এখনই বাড়তে শুরু করেছে গরম মসলার দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জিরা, লবঙ্গ, গোলমরিচ, দারুচিনিসহ গরম মসলার দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া এবং ঈদুল আযহার সময় পণ্য সংকটের আশঙ্কায় এসব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে আমদানিকারকেরা বলেছেন, অল্পসময়ের মধ্যেই গরম মসলার বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ালে লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।

ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ভারতীয় জিরার দর ছিল ৩২০-৩৩০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৮৫ টাকায়। প্রতি কেজি লবঙ্গের পাইকারি দাম ১০৪০ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১০১০ টাকা। গোলমরিচ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পাইকারিতে ২০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দুই ধরণের দারুচিনি পাওয়া যায়। তুলনামূলক ভালো মানের প্রতি কেজি দারুচিনি বর্তমানে ৩৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটি দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩৬০ টাকা। আরেক ধরণের দারুচিনির বর্তমান পাইকারি মূল্য প্রতি কেজি ৩০৫ টাকা। যা দুই সপ্তাহ আগে ২৯৫ টাকায় বিক্রি হতো। জায়ফল ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৯০ টাকায়। এছাড়া মোটা জয়ত্রী প্রতি কেজি ২১০০ টাকা ও চিকন জয়ত্রী ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে যথাক্রমে দাম ছিল ২০৮০ টাকা ও ২৩০০ টাকা। তবে এলাচের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে ১৩৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহে প্রতি কেজি এলাচের দাম ১৪৩০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স অমল সাহা বলেন, ‘আমদানিকারকদের থেকে বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে গরম মসলার দাম বেড়েছে। সামনে ঈদ, তখন মালের সংকট হয় কিনা, এজন্যও দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন দাম কমতে শুরু করেছে।’

বিয়েশাদি, মেজবান, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রেস্তোরাঁয় এসব মসলার ব্যবহার বেশি হয়। এছাড়া ঈদুল আযহা এলে ঘরে ঘরে এসব মসলার ব্যবহার হয়। তখন চাহিদা বেশি থাকে এবং দামও বেড়ে যায়।

মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের এবি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এবং বাংলাদেশ গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে মসলার দাম কিছুটা বেড়েছে। এটা আর বাড়বে না। এখন স্বাভাবিক থাকবে। সামনে কোরবারের ঈদ উপলক্ষেও বাড়ার সুযোগ নেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের মতোই আছে। তাই মানুষ চাল-ডাল না কিনে মসলা কিনবে না। দাম বাড়লে মানুষ কম কিনবেন। মাল থেকে যাবে। বাজারদর এখন কমতে থাকবে।’

পেঁয়াজ -আদা-রসুনের দাম এখনো বাড়তি

কৃষকদের সুরক্ষা দিতে গত ৬ মে থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র। এছাড়া আমদানির অনুমোদন দেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। এর প্রভাবে গেল তিন সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে পেঁয়াজের বাজার।

ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজের প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য বর্তমানে ৪২-৪৩ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৩২-৩৩ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে নাসিক জাতের পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৭-৩৮ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ছিল ৩০-৩১ টাকা। চীনা রসুন পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায় এবং দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে চীন থেকে আমদানিকৃত রসুনের দাম ছিল ১০০ টাকার নিচে এবং দেশি রসুন ছিল ৫০-৬০ টাকা। বর্তমানে চীনা আদার প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ৬৫-৭০ টাকা এবং মিয়ানমারের আদার দাম ৩০-৩৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে চীনা আদা বিক্রি হতো ৫৫-৬০ টাকায় এবং মিয়ানমারের আদা ছিল ২৫-৩০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় পেঁয়াজের দাম এখনো বাড়তি। গুদামে যা ছিল তা প্রায় শেষের দিকে। আমদানির অনুমতি না পেলে পেয়াজের দাম কমবে না। এছাড়া আদা-রসুনের দাম বেড়েছে ডলারের দামবৃদ্ধির কারণে।’

ড্রাইফুডের দামও বাড়তি

এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ড্রাইফুডের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। মূলত বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ১৩৫ পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এসব পণ্যের মধ্যে ড্রাইফুডও রয়েছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে টক ও মিষ্টি দুই ধরণের আলুবোখারার দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা। বাজারে বর্তমানে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এই ড্রাইফুড। প্রতি কেজি ছোলাবাদাম ১২০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকা। কাজুবাদামের পাইকারি দাম প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৭০০ টাকা কেজিতে। পেস্তাবাদামের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি। এছাড়া প্রতি কেজি কাঠবাদাম ৬৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে।

সাউদার্ন ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপের কারণে কিছু ড্রাইফুডের দাম বেড়েছে। মূলত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান থেকে এসব পণ্য দুবাইয়ে যায়। আমরা দুবাইয়ের সরবরাহকারী থেকে ক্রয় করি। এছাড়া কিছু পণ্য ইউরোপ থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে আসে। শ্রীলঙ্কার অস্থিরতার কারণে পণ্য আসতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দুবাই থেকে আমদানি করা পণ্যগুলো কলম্বো বন্দর হয়ে আসে। এই রুটে এক সপ্তাহের জায়গায় এখন ২৫-৩০ দিন লেগে যাচ্ছে পণ্য আসতে। আর ডলারের দাম বৃদ্ধি তো আছেই। এসব কারণেই ড্রাইফুডের দাম বেড়েছে।’

এদিকে বেকারি পণ্যে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে এসব পণ্যের বাজার কয়েক মাস ধরে অস্থিতিশীল। দুই সপ্তাহ আগে খাবার সোডা প্রতি টন ৬৫০০০ টাকা দরে বিক্রি হতো পাইকারি বাজারে। বর্তমানে তা ৯৬০০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি টন অ্যামোনিয়া দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫০০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরারুট প্রতি টন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭২০০০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ৬০০০০ টাকা।

খাতুনগঞ্জে মান্নান ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আবদুল মান্নান বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সোডা, অ্যামোনিয়া, এরারুটসহ বেকারির কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। এই কারণে এসব পণ্যের দাম এখন অনেক বেশি। খাবার সোডা এখন শুধু চীন থেকে আনা হয়। সেখানে বুকিং মূল্য বেশি। কাঁচামাল সংকটের কারণে এসব পণ্যের অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement