২৮ মার্চ, ২০২৪, বৃহস্পতিবার

গল্পের ঈশপ, ঈশপের গল্প

Advertisement

জন্মের সাথে মৃত্যুর এক অলেখ্য যোগ থাকে। জন্ম হওয়া মানেই মৃত্যুর সাথে সন্ধি। তবে কেউ মৃত্যুকে পেরিয়ে যান। শরীরে মৃত হলেও থেকে যান মানুষের মুখে মুখে। বইয়ের পাতায়, শিশুদের অন্তরে। কালজয়ী হয়ে ওঠেন পৃথিবীর বুকে। এমনই একজন হলেন ঈশপ…

শুধু ঈশপ নামেই পরিচিত তিনি। আর গল্পগুলো পরিচিত ‘ঈশপের গল্প’ নামে। যে গল্পে থাকে ঈশপের পরামর্শ আর শুভভার্তা। নীতিবাক্যকে সহজেই সমাজে প্রতিস্থাপনের কাজ করে গেছেন। গল্পে গল্পে, কাহিনীতে রয়ে গেছেন ঈশপ। এক গ্রিক দাস পরিবারে জন্ম নেয়া ঈশপ গল্পে গল্পে নীতিবাক্যেকে চিত্তাকর্ষক করে তুলতেন। দাস হিসেবে জীবন শুরু করলেও ঈশপের দ্বিতীয় মনিব তার গুণমুগ্ধ হয়ে তাকে মুক্তি দেন।

মুক্ত জীবন পেয়ে ঈশপ বিভিন্ন দেশ বিদেশে ঘুরতে লাগলেন। যেখানেই যান, সেখানেই গল্প বলার আসর জমিয়ে ফেলেন। এই গুণতো তার রক্তে মিশে আছে, এর থেকে মুক্তি কোথায়? তার মুখনিঃসৃত গল্প চারদিক ছড়িয়ে যেতে লাগল। অনেকেই ঈশপের গল্পের ভক্ত হতে লাগলো। তার নীতিশাস্ত্রগুলো মানুষের মনে আবেগের সঞ্চার করত।

সেই আবেগকে তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আজ নিয়ে এলাম ঈশপের ৩টি গল্প-

ছাগল আর গাধা

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, যারা অন্যের ক্ষতি করতে চায় তারা নিজের আরো বড় ক্ষতির মুখে পড়ে। এ সম্পর্কে ঈশপের একটি গল্প আছে। গল্পটি এ রকম-

একটি লোকের ছিল একটি ছাগল আর এক গাধা। মালিক গাধাটার ব্যাপক যত্ন নিত, ভালো ভালো খাবার খেতে দিল। তা দেখে ছাগলটা ঈর্ষায় জ্বলে পুড়ে যেত। একদিন সে গাধাটাকে শিক্ষা দেয়ার জন্য একটা ফন্দি আঁটল। গাধাটাকে ডেকে বলল, “তোমার জন্য দুঃখ হয় বন্ধু, কী খাটুনিটাই না তোমাকে দিয়ে খাটায় এরা! একবার তোমাকে পেষাই করার যন্ত্রে জুড়ে দিচ্ছে তো আরেকবার কাঁড়ি কাঁড়ি বোঝা টানাচ্ছে। তুমি যদি এ অবস্থা থেকে বাঁচতে চাও তাহলে মৃগীরোগীর ভান করে কোনো একটা খাদে নেমে খানিক বিশ্রাম নাও।”

ছাগলের পরামর্শ গাধার খুব মনে ধরল। কিন্তু খাদে গড়িয়ে পড়তে গিয়ে চোট লেগে নানা জায়গায় কেটে গেল তার। গাধার মালিক খবর পাঠাল সেখানকার হাতুড়ে চিকিৎসককে। চিকিৎসক হুকুম দিল ছাগলের রক্ত যোগাড় করার জন্য। তার মত হলে গাধার ক্ষতের ওপর ছাগলের রক্ত ঢালতে পারলেই গাধা ভালো হয়ে যাবে। চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী মালিক তার নিজের ছাগলকেই জবাই করে গাধাকে সারিয়ে তুলতে লেগে গেল।

ছাগল চেয়েছিল তার কুবুদ্ধির কারণে মালিক গাধাকে শাস্তি দেবে। কিন্তু গাধাকে কুবুদ্ধি দেয়ার পরিণতিতে তার যে জীবন যাবে তা ভাবতে পারেনি ছাগলটি।

অনর্থক দ্বন্দ্ব

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, আমাদের শরীরের প্রত্যকটি অঙ্গের বিশেষ গুরুত্ব ও প্রয়োজনীতা রয়েছে। একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল। বাঁচতে হলে একে অন্যের সাহায্য নিতে হয়। পেট ও পায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে ঈশপ একটি গল্প লিখেছেন।
একদিন পেট আর পায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল- কার শক্তি বেশি তা নিয়ে। পা পেটকে বলল, তোমাকে আমি বহন করে নিয়ে বেড়াই। তাই তোমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, আমারই শক্তিই বেশি।

পেট বলল, আমি খাবার খেয়ে হজম করি, তোমায় পুষ্টি জোগাই, তা না হলে তুমি হাঁটতে পারতে কি করে?
পা বলল- আমি পায়ে হেঁটে খাবার জোগাড় করি বলেই তো তুমি খাদ্য পাও।

পেট বলল- আমি তো তোমাকে পায়ে হাঁটার শক্তি জোগাই। আমি শক্তি না জোগালে তুমি কেমন করে হাঁটতে?
পা ও পেট এভাবে নানা যুক্তি দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী প্রমাণের চেষ্টা করলেও তারা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয় জীবন বাঁচানোর জন্য তার দুজনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ঠকাতে গেলে ঠকতে হয়

এক নেকড়ে মনে মনে ভাবল কোন ছদ্মবেশ ধারন করে যদি আমি নিজের চেহারাটা পালটে ফেলতে পারি তা হলে আর আমার খাবার ভাবনা থাকবে না।

এই ভেকে সে এক মেষের চামড়ায় গা ঢেকে মেষপালকের চোখে ধুলি দিয়ে মেষের দলে ঢুকে তাদেরই মত ঘাস খাওয়ার ভাণ করতে লাগল।ক্রমে সন্ধা হল।

রাখাল তার মেষগুলিকে তাড়িয়ে এনে খোঁয়াড়ে ‍পুরলো।

রাত্রে খাবারের জন্য তার একটা মেষ জবাই করা দরকার বলে একটা মেষকে সে আলাদা করে অনেক অনেক কিছু দিয়ে ঘিরে না খাইয়ে রাখল। ভাগ্যক্রমে সে মেষটা আসলে মেষ নয়, মেষের চামড়ায় গা ঢাকা সেই নেকড়ে। রাত্রে যথাসময়ে তাকেই জবাই হতে হলো রাখালের হাতে।

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement