২০ এপ্রিল, ২০২৪, শনিবার

উপন্যাস : এখন অনেক রাত, শেষ পর্ব

Advertisement


বানিয়াচঙে পলির দাদুবাড়ি। এখন অনেক রাত। পলির দাদু খানকা ঘরে বসে আছেন চিন্তিত ভঙ্গিতে। পাওয়ারফুল চশমাটা আরও ঘোলা লাগছে। মাথার ওপর টিউবলাইটের আলোটাও মনে হচ্ছে সলতে বাতি। খানকা ঘরটায় কয়েকটা পুরনো সোফা। কোনার দিকে একটা খাট। একটা চেয়ার টেবিল। খাটের ওপর বসে আছে সাতচল্লিশ বছরের একজন। পলির দাদু উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তার দিকে। খাটে বসা লোকটার গায়ে কাঁচা হলুদ রঙের একটা কোট। কোটের নিচে একটা সবুজ টি শার্ট। পরনে আধা ময়লা জিন্সের প্যান্ট। সোফার অন্য কোনে গুটিশুটি মেরে বসা পলি। লোকটার নাম এন্তাজ উদ্দিন। বাড়ি সিলেট। প্রবাসে থাকেন। ইতালিতে নাকি নিজের মুদি দোকান। সে দোকানে কতজন কাজ করেন, কী কী আয় সে ফিরিস্তি শোনাচ্ছেন। পলি এখানে বেড়াতে এসেছে তিনদিন। এন্তাজ উদ্দিনও দ্বিতীয় বিয়ের জন্য এই অঞ্চলে পাত্রী খুঁজতে বেরিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এসে পড়েছেন পলির দাদু আবু কাওছারের হাতে। লোকটাকে বেশ মনে ধরেছে আবু কাওছারের। তাই নিজে ডেকে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।

আবু কাওছারের ভাবনা, পলির শ্বেতী। ধীরে ধীরে ধবল হয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীর। লোকটা ভাল। আগের বউ জাহাজডুবিতে মারা গেছে বলে শুনেছেন। লোকটারও ব্যাপক আগ্রহ বিয়েতে। পলিকে বেশ পছন্দ হয়েছে তার। আবু কাওছার প্রাথমিক কথা সেরে নিতে চাইছেন। পলি রাজি হলে, ওর বাবা মাকে নিয়ে এসে ধুমধাম করেই বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে তার।
-তোমার কী ইচ্ছা পলি, খোলামেলা বল।

দাদু আমি ওনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে চাই।

আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে বাইরে যাই। পাঁচ মিনিট সময়। যা বলার বলে নে।

আবু কাওছার বারান্দায় গিয়ে গলা খাকরি দিচ্ছেন। বারান্দায় পাতা পুরনো আমলের হুকোয় আগুন জ্বলছে তখনো। নল মুখে দিয়ে টান দিলেন একটা। ঘড়ঘড় করে আওয়াজ হল একটা। হাঁপানির টান উঠলে আবু কাওছারের বুকের ভেতর থেকেও এমন আওয়াজ আসে রাতের বেলা। তাই এই আওয়াজের সঙ্গে বেশ সখ্যতা তার। হুকোয় দু’তিনটা টান দিতেই বেরিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল পলি। কোন কথা নেই মুখে। কী কথা হল তাও জানেননা। ভেতরে ঢুকলেন। লোকটার কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে বললেন- কী বলে গেল মিয়া! পোকা ধরা দাঁতে রহস্যের হাসি দিলেন এন্তাজ উদ্দিন।

আরে দাদু, বসেন। পাত্রীর বয়স কম। বিয়ে শাদির ব্যাপারে এত তাগাদা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। সে আমাকে বলে গেছে, কাল সকালে সিদ্ধান্ত জানাবে।

আলহামদুলিল্লাহ, আমি তো ভাবছি কোন কথাই বলে নাই।

সেদিন ভোরেই সবার অজান্তেই সাতচল্লিশ বছরের এন্তাজ উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে গেল পলি। ফজরের ওয়াক্তে পলির দাদু আবু কাওছার মেসওয়াক আর বদনা হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখেন দরজা খোলা। ভেবেছেন লোকটা বুঝি প্রাকৃতিক কাজ সারতে গেছেন। ঘরে ঢুকে দেখেন আধাময়লা ব্যাগ- কাপড়চোপড় কিছুই নেই। পলির ঘরে গিয়ে নিশ্চিত হলেন। ও আল্লারে বলে উঠানে চিৎপটাং হলেন। মুখ দিয়ে অনবরত গ্যাঁজলা উঠতে লাগল। বাড়ির রাখাল হরিদাসের চিৎকারে একে একে খুলে যেতে লাগল আবু কাওছারের ছেলে আর নাতি-পুতিদের দরজা। সে এক এলাহী কা-। তবে আধাঘন্টা মাথায় পানি ঢালার পর এ যাত্রায় তিনি বেঁচে গেলেন।

অবনীর সঙ্গে গান শুনেছি ভোর তিনটা পর্যন্ত। তারপর যে যার মত। ভোরের দিকে হালকা শীত পড়ছিল। পাতলা নকশিকাঁথা টেনে জবুথবু হয়ে মাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঘুমটা জেঁকেও বসেছে একটু। ক্রিং ক্রিং করে বিশ্রী শব্দে বেজে উঠল ফোন। ওপাশে ডা. পারমিতা। এই সাতকালে কোন বিপদ হলো না তো?

স্লামালেকুম আন্টি।

কান্না ছাড়া আর কোন শব্দ কানে আসল না। হাউ মাউ করে কাঁদছেন পারমিতা। তাহলে কী পলির বাবা ইন্তেকাল করলেন! শুনেছিলাম ওনার পাকস্থলীতে কী একটা সমস্যার কথা।

আন্টি এই ভোরবেলায়। কোন বিপদ হল না তো?

আমার সব শেষ হয়ে গেছে বাবা।

আহা কী হয়েছে বলবেন তো।

পলিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা ভোর থেকে।

পলি কী বাসায়ই ছিল?

না, ওর দাদু বাড়ি গেছিল। ওর দাদু নাকি বুড়া কোন এক পাত্র ধরে নিয়ে আসছে রাতের বেলা। ভোর থেকে ওদের দুজনকে আর খুঁজে পাচ্ছেনা কেউ।

সর্বনাশ। পুলিশে রিপোর্ট করেছেন?

না বাবা, মান সম্মানের ব্যাপার। আগে দেখি খোঁজ মেলে কী না। মেয়েটার যে কী হল আল্লাহই জানে।

কিছু ভাববেন না আন্টি। আমি একটু ঢাকার বাইরে আছি। আজ দিনের মধ্যেই চলে আসব। যে করেই হোক ওকে খুঁজে বের করতে হবে। ও যদি লোকটাকে বিয়ে করতে চায়, আমরাই আয়োজন করে দিয়ে দেব। কিন্তু এভাবে রাতের আঁধারে নিখোঁজ হওয়া তো কোন ভাল কথা নয়।

প্লিজ বাবা, তুমি কিছু একটা কর। আমি জানিনা ওর কপালে কী আছে। কোন লোকের পাল্লায় যে পড়ল।

লোকটার কোন ঠিকানা আছে?

না, শুনেছি- সিলেটে বাড়ি। বাকি নাম ধাম, ঠিকানা কিছুই নেই। সব দোষ ওই বুড়ার। ছোট মেয়েটার মাথা নষ্ট করছে।

আচ্ছা আন্টি বাদ দেন। দেখা যাক কী করা যায়। যতটা সম্ভভ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ লাগান। আমি বিকেলের মধ্যেই চলে আসব।

ঘুম চলে গেছে। ভাল লাগছে না। সকালটা অসহনীয় লাগছে। দমবন্ধ লাগছে অর্ধচন্দ্রাকার ঘরটিতে। অবনী নিশ্চিত বারটার আগে ঘুম থেকে উঠবে না। ততক্ষন ওর জন্য অপেক্ষা করা সম্ভব না। পলির বিপদ। আমাকে যে করেই হোক খুঁজে বের করতে হবে। এমন তো হতে পারে, লোকটার সঙ্গে আরো সাঙ্গ পাঙ্গ ছিল। পলিকে ফুসলিয়ে কোনমতে ঘর থেকে বের করেই তুলে নিয়ে গেছে জোর করে। ভাবতেও অসহ্য লাগছে। কিছু সত্য বা অর্ধসত্য ভাবতেও অসহ্য লাগে। মাথায় যন্ত্রণা হয়। অবনীকে ফোন করে ঘুম ভাঙানো যেতে পারে। ঠিক হবেনা। বেচারী ভোর রাতে ঘুমিয়েছে। টেবিলে রাখা রাইটিং প্যাড নিয়ে লিখলাম ক’টা লাইন।

‘‘ অবনী
আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি। ওর নাম পলি। মফস্বল শহরের কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। পলি মেয়েটা অনেক ভাল। ওর সঙ্গে আমার মোট দু’বার দেখা হয়েছে। একবার ট্রেনে। দুটি বেনি করা স্কুল ছাত্রীর মত লাগছিল পলিকে। কিশোরী চোখে রাজ্যের মুগ্ধতা। দ্বিতীয়বার আমি ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম। এটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা। তোমাকে বলা হয়নি, অসম্ভব সুন্দরী পলি, কিন্তু ঠিক তোমার মত নয়। তোমার সৌন্দর্যের ভিতর একটা মাদকতা আছে, আর পলির- আটপৌরে সাদাসিদে একটা ভাব আছে। এমন নিরীহ চাহনির কোন মেয়ের দিকে তাকালে মায়া মায়া লাগে। পলি আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে নিজে থেকে। জানো, ওর সারা শরীর ছেয়ে যাচ্ছে শ্বেতীতে। দেখতে দেখতে ভ্রু, চোখের পাতা, ঠোঁট, চুল সব ধবল শাদা হয়ে যাচ্ছে। পলি আমাকে ঠকাতে চায়না বলেই দূরে ঠেলে দিয়েছে।

যাক অনেক কথা বলে ফেললাম। জানিনা, তোমাকে কেন বলছি এসব। তোমাকেও অসম্ভব পছন্দ করি আমি। একসঙ্গে দুজনকে ভালবাসা গেলে তোমার জন্য ভালবাসা অর্ধেকটা রেখে বাকিটা পলির কাছে পাঠিয়ে দিতাম। তারও তো উপায় নেই। তাই বলে তোমাকে ভালবাসিনা তা নয়। এ অন্যরকম ভালবাসা। প্রেম নয়, শুধু ভালবাসা, শুধু ভাললাগা। হয়তো আংশিক প্রেমও। প্রেমের এই জটিল রসায়ন বোঝার সাধ্য আমার নেই।

যাক, আমি খুবই স্যরি। তোমাকে না জানিয়েই আমার এই খামারবাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে। পলির ঘোর বিপদ। ভোর থেকে ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তোমার জন্মদিনে কিছু দিতে পারিনি। তাই এই সামান্য উপহার। সাবধানে ঢাকায় ফিরো। দ্রুত চলে আসব।

ইতি
সাগর’’

ঝটপট বেরিয়ে বাগান থেকে পঁচিশটি তাজা গোলাপ তুলে আনলাম। সুন্দর করে তোড়া বেঁধে চিঠিটা সহ রেখে দিলাম অবনীর দরজায়। তারপর সোজা বেরিয়ে পড়লাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। সূর্যের আলো কেবল উঁকি দিচ্ছে শালবনের ফাকফোঁকর দিয়ে। জনমানুষ নেই। কতটা পথ হাঁটতে হবে কে জানে! এই অঞ্চলে শালবনের ভেতর দিয়ে রিকশা ভ্যান চললেও এখন তার দেখা মেলার সম্ভাবনা খুব কম। ধুলো মাখানো পথ ধরে হাঁটছি। পায়ের কালো জুতো শাদা হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে পা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে উড়িয়ে হাঁটি। মৃদু বাতাসে পেছনে উড়বে ধুলোর কুন্ডলি। সেই কুন্ডলিতে মিশে পেছনে ছুটতে থাকবে জমাট কষ্টগুলো।

এমন একটা তরতাজা সকালে প্রশান্ত মন নিয়ে ঢাকার পথে ফিরবো। কিন্তু মানুষ যা ভাবে, তা কী আসলেই হয়! হলে কতটুকুই বা হয়। অবশ্য ভাবনাগুলোকে যারা সত্যিকারের করে ভাবতে পারে তারাই বিজয়ী হয় সময়ের সঙ্গে টানাপড়েনে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যখন পৌঁছালাম, তখন বেলা সাড়ে বারোটা। সকাল থেকে পেটে পড়েনি কিছুই। খাওয়ার কোন ইচ্ছেও নেই। হবিগঞ্জের বাসের একদম পেছনের দিকের দু’টো সিট নিয়ে পা তুলে শুয়ে পড়লাম। কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে বাস ছুটে চলেছে নরসিংদীর পথে। চোখ খুলে রাখতে পারছিনা। রাজ্যের যত ঘুম, সব এসে ঝুলে পড়ছে চোখের পাতায়। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। দুঃস্বপ্ন দেখার সময় মানুষের চোখ নাকি পিটপিট করে কাঁপে। ঠোঁটে অদ্ভুত রকম নড়াচড়া হয়। মুখভঙিতে অস্বাভাবিক ভাব আসে। আর সুন্দর স্বপ্ন দেখলে চেহারার উজ্বলতা বাড়ে, মুখ হাসি হাসি করে সে স্বপ্ন দেখে মানুষ। তাহলে কী দুঃস্বপ্ন দেখছি? নিজেই নিজের মুখ দেখে আঁতকে উঠছি।

ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন। হিমেল ছেলেটা দিগম্বর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেসক্লাবের সামনে। গলায় ঝুলানো ব্যানার। ব্যানারে লেখা ‘‘ আমি অবনীর জন্য পাগল’’। গলায় মোটা দড়িতে গোটা দশেক ডিভিডি মালার মত করে ঝুলানো। দু’হাতে লিফলেট। উৎসুক লোকজন গোল হয়ে সে দৃশ্য দেখছে। হিমেল আঙুল উঁচিয়ে ভাষণ দেয়ার ভঙ্গিতে তার আর অবনীর বেড সিনগুলোর বর্ণনা দিচ্ছে। উৎসুক কিছু মানুষ হাঁ করে সেসব বক্তব্য শুনছে। কেউ কেউ দু’একটা প্্রশ্নও ছুড়ে দিচ্ছে। তারপর কী হল! অবনী মেয়েটা এখন কোথায়! হায়রে মেয়ে মানুষ! আহারে, কত সুন্দর ছেলেটা! একেকজনের মুখ থেকে বেরুতে লাগল এমন ছোট ছোট বাক্য। মাঝে মাঝে ভিড় ঠেলে দু’একজন ফটো সাংবাদিক নানান ভঙ্গিতে ছবি তুলছেন। একজন ফটো সাংবাদিক পাশের বড় রেইনট্রির মগডালে উঠে মাথার ওপর থেকে জটলা নিতে ক্লিক করে যাচ্ছেন একের পর এক। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই দেশের চতুর্থ শ্রেণীর কিছু অনলাইন পত্রিকায় ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সেই ছবি। কেউ কেউ অবনী আর হিমেলের অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও লিংক দিয়ে বড় হেডলাইন করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

চতুর্থ শ্রেণীর অনলাইনের সম্পাদকদের একটা গ্রুপ ডিভিডি নিয়ে ছুটে গেছেন এমপি আলাউদ্দিন চৌধুরীর গুলশানের বাড়িতে। ব্ল্যাক লেভেল দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হচ্ছে। এই ডিভিডি যাতে কোনমতেই তাদের অনলাইনে তুলে দেয়া না হয়, তা নিয়ে দেনদরবার করছেন আলাউদ্দিন চৌধুরীর পিএস কামাল উদ্দিন। সম্পাদকরা কোন মতেই মানতে রাজি হচ্ছেন না। কামাল উদ্দিন একটু পর পর প্রত্যেকের হাতে দেয়া খাম নিয়ে ভেতরে গিয়ে আরও মোটা করে আনছেন। এরই মধ্যে আন্ডারগ্রাউ- সম্পাদকদের মধ্যে দু’টি দল হয়ে গেছে। একদল বলছে এ অন্যায়- আরেকদল বলছে এই ভিডিও অনলাইনে না ছাড়লে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকারে পতিত হবে। এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক, হৈ চৈ।

খবরটা পৌঁছেছে অবনীর কাছেও। ঘুম ভেঙে দরজার সামনে পড়ে থাকা পঁচিশ গোলাপের তোড়া বুকে টেনে নিয়েছে। চিঠিটা পড়েছে অন্তত আট দশবার। বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠেছে। বালিশে কান্না লুকানোর চেষ্টা করেও পারেনি। পলি মেয়েটা মাথায় ঢুকে গেছে। এর মধ্যেই ঢাকা থেকে আলাউদ্দিন চৌধুরীর ফোন। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় তলব করা হয়েছে। পিএস কামাল উদ্দিন তার পরেই ফোন করে বাসায় চতুর্থ শ্রেণীর সম্পাদক গ্রুপ আর প্রেসক্লাবের সামনে হিমেলের অবস্থানের কথা জানিয়ে সমূহ বিপদের আভাস দিয়ে শান্ত থাকতে বলেছে।

তারপর থেকে সুন্দর একটা লাল গাউন পরে সেজে গুজে দিঘীর পাড়ে পায়চারি করছে অবনী। মাথায় লাল ব্যান্ড। পুতুল পুতুল লাগছে। টানা বেজে চলেছে হাতে থাকা ফোন। স্ক্রিণে লেখা ভেসে উঠছে ‘‘বাবা’’। হাত পেছনে নিয়ে দিঘীর দিকে যতটা সম্ভব জোরে ফোনটা ছুঁড়ে মারল ফোনটা। দিঘীর ঘোলা জলে ছপ করে একটা শব্দ হল। ৎ

পানি বৃত্তাকারে ঘিরে ঢেউ তুলে অতলে টেনে নিল ফোনটাকে। ফোনটা যেখানে তলিয়েছে ঠিক সেখানেই এখন উপুড় হয়ে ভাসছে অবনী। ঝকমকে রোদে চকচক করছে লাল গাউনটা। কালো চুল ছড়িয়ে আছে দিঘীর বুকে। একঝাক রাজহাঁস খেলে বেড়াচ্ছে অবনীর চারপাশে। উঠতে পারছেনা অবনী। ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে গভীর জলে। অন্ধকার জলের অতল থেকে কেবল ভেসে আসছে মিহিন কণ্ঠস্বর ‘‘ সাগর, এ্যাই সাগর।’’

সমাপ্ত

Advertisement

আরও পড়ুন

Advertisementspot_img
Advertisement

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

Advertisement